তাবলীগ জামাত: দাওয়াত এবং উম্মাহ পুনর্জীবিত করার ১০০ বছর।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম, এই সাইটটি শুরু থেকে বিস্তারিতভাবে এবং বিশ্বস্ততার সাথে তাবলীগ জামাতের ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রদান করে। আমরা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পূর্ণ উদ্ধৃতি প্রদান করি।

তাবলীগ জামাত  বিশ্বে সবচেয়ে বড় ইসলামিক আন্দোলনের অপ্রাতিষ্ঠানিক নাম, যার আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে। এটি মুসলিম বিশ্বাস (ইমান) পুনর্জীবিত করা এবং নবী (সাঃ) এর সুন্নাহতে ফিরে আসার দিকে মনোনিবেশ করে।

তাবলীগ জামাত ১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে (জুমাদাল-আওয়াল ১৩৪৫) শুরু হয়েছিল। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে (জুমাদাল-আওয়াল ১৪৪৫) তাবলীগ জামাত ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুসারে ১০০ বছর পূর্ণ করেছে।

বিঃদ্রঃ যারা ২০১৪ তাবলীগ জামাত বিভাজন সঙ্কট সম্পর্কে জানতে চান, তাদেরকে নিম্নলিখিত প্রবন্ধটি পড়ার অনুরোধ করা হচ্ছে: তাবলীগ জামাত বিভাজনের ৩টি কারণ এবং কিভাবে এটি পুনঃগঠিত হয়েছে

তাবলীগ জামাত: ঘটনাবলীর পর্যায়ক্রম

এই ঘটনাবলী বিশ্বাসযোগ্য সূত্র + মাওলানা আব্দুর রহমানের সংকলন সিরেবন ইন্দোনেশিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে। মাওলানা আব্দুর রাহমান মাওলানা ইনআমুল হাসানের খাদেম (ঘনিষ্ঠ সহযোগী) হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার শুরা সদস্যদের একজন, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ।

১৮৮৬ মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী বিন মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাইল কান্ধালা, মুজফফর নগর, উত্তর প্রদেশ, ভারতে জন্মগ্রহণ করেন।

উৎস: সাওয়ানিহ হাজরতজী সালিস, I/14

মাওলানা ইলিয়াস ছিলেন একটি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। মাওলানা ইলিয়াসের বাবা মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাইল শ্রমিকদেরকে পানি পান করানোর জন্য রাস্তার পাশে অপেক্ষা করতে পরিচিত ছিলেন। এরপর তিনি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাতে ২ রাকাত সালাত পড়তেন। একদিন, তিনি কিছু শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেন যারা কাজ খুঁজছিল। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন তারা কত টাকা উপার্জন করবে এবং যদি তারা তার থেকে কালিমা এবং সালাত শিখতে রাজি হয়, তাহলে তাদের তিনি একই পরিমাণ অফার করেন। তারা রাজি হয় এবং তখন থেকে প্রায় ১০ জন মেওয়াতি ছাত্র সব সময় তার সাথে থাকত। এভাবেই বাংলাওয়ালি মসজিদে মাদ্রাসার শুরু হয়।

উৎস: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন এবং তাঁর মিশন, পৃষ্ঠা ৪-৫

মাওলানা ইলিয়াসের ভাই, মাওলানা মুহাম্মাদ, মৃত্যুর ১৬ বছর আগে থেকে একটি তাহাজ্জুদও মিস করেননি। তিনি বিতির নামাজ পড়ার সময় সেজদায় মারা যান।

উৎস: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন এবং তাঁর মিশন, পৃষ্ঠা ১৮

মাওলানা ইলিয়াসের মা, বিবি সফিয়্যা, প্রতিদিন ৫০০০ বার দুরুদ শরীফ, ৫০০০ বার ইসমি-জাত আল্লাহ, ১০০০ বার বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম, ১০০০ বার হাসবুনাল্লহু ওয়ানি’মাল ওয়াকীল এবং মঞ্জিলসহ অন্যান্য জিকির হাজারবার পড়তেন। রমজান মাসে এর সাথে তিনি প্রতিদিন পূর্ণ ১খতম এবং আরো ১০ পারা কুরআন পড়তেন। এইভাবে, তিনি রমজানে ৪০বার পবিত্র কুরআন খতম সম্পন্ন করতেন।

মাওলানা ইলিয়াস ছিলেন তার প্রিয় সন্তান, এবং তিনি তাকে বলতেন,  “এমনটা কীভাবে দেখছি যে, আমি সাহাবাদের মতো আকার দেখছি তোমার সাথে?”

উৎস: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন এবং তাঁর মিশন, পৃষ্ঠা ৭

মাওলানা ইলিয়াস নিজেও একজন মহৎ পুরুষ ছিলেন। বলা হত যে, তিনি আল্লাহর জিকিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একাকী থাকতেন। যখন তিনি নিজামুদ্দিনে ছিলেন, তখন কখনও কখনও তিনি আরব সারার গেটে দুপুর পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন, যেখানে আল্লাহর মহান ওলী হাজরত নিজামুদ্দিন আওলিয়া ইবাদত করতেন।

উৎস: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন এবং তাঁর মিশন, পৃষ্ঠা ২০

১৮৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি ২ – শাইখুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মাদ জাকারিয়া কান্ধলভী বিন মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ১০ রমজান ১৩১৫ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। মাওঃ ইয়াহইয়া মাওলানা ইলিয়াসের ভাই ছিলেন। সম্পর্কে শাইখুল হাদীস জাকারিয়া মাওলানা ইলিয়াসের আপন ভাতিজা। নাম উল্লেখ ছাড়া শুধু শাইখুল হাদীস বলে দক্ষিণ এশিয়ায় ইনাকেই বুঝানো হয়।

উৎস: মাওলানা ইয়াহইয়ার সীরাত পৃষ্ঠা ২৯৪

তাবলীগি জামাতের ইতিহাস
শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া

১৮৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি ২৬মাওলানা ইসমাইল (মাওলানা ইলিয়াস‘ এর বাবা) ইন্তেকাল করেন।

সূত্র: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন ও মিশন, পৃষ্ঠা 5

১৯১৭ সালের ২০ মার্চমাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী বিন মাওলানা ইলিয়াস জন্মগ্রহণ করেন।

সূত্র: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/80

টেবলীগ জামাতের ইতিহাস
মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী

১৯১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিমাওলানা ইলিয়াস (৩২ বছর বয়স) বাংলাওয়ালি মসজিদে বাস করতে শুরু করেন। সেই সময় এটি মাত্র ছোট একটি মসজিদ ছিল, যার ভিতরে একটি ছোট ঘর ছিল। এটি ঘন বন দ্বারা ঘেরা ছিল। সেখানে ট্যাপের জল ছিল না এবং জল অন্য স্থান থেকে আনা লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র ৪ থেকে ৫ জন মানুষ ইবাদত করত, যারা সবাই তার ছাত্র ছিল। মাওলানা ইলিয়াস মসজিদে জিকির করে অনেক সময় কাটাতেন।

সূত্র: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/24

মাদ্রাসার খাবার এত কম ছিল যে, তাদের অনেক সময় অনাহারে থাকতে হতো, কিন্তু মাওলানা ইলিয়াস এটি সহ্য করে নিতেন। চরম দারিদ্র্যতা তার উপর কোনও প্রভাব ফেলেনি। কারণ যা তাকে উদ্বেলিত করতো, তা ছিল ভবিষ্যত ভরপুরতা ও সমৃদ্ধির সম্ভাবনা।

সূত্র: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন ও মিশন, পৃষ্ঠা ১৯

১৯১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিমাওলানা ইনআমুল হাসান কান্ধলভী বিন মাওলানা ইকরামুল হাসান কান্ধলভী, মুজফ্ফর নগর, ইউপি, ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা ইলিয়াস এর ভাতিজা শাইখুল হাদীস জাকারিয়ার মেয়ের জামাতা ছিলেন।

সূত্র: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/172

টেবলীগ জামাতের ইতিহাস
মাওলানা ইনআমুল হাসান

১৯২২হাজী আবদুল ওয়াহাব নয়া দিল্লি, ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা ইলিয়াসের নিকট যারা তাবলীগের জন্য নিজের পূর্ণ জীবন উৎসর্গ করার শপথ করেছিলেন, তাদের প্রথম পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন। তিনি সুফি তারিকতের মাওলানা শাহ আবদুল কাদের রাইপুরি এর চতুর্থ খলিফা। বর্তমানে, তিনি তাবলীগের একজন অন্যতম প্রবক্তা, তাঁর সনদ বা সম্পৃক্ততা তিনজন  বিশ্ব আমীরের সঙ্গেই যুক্ত (মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা ইউসুফ, এবং মাওলানা ইনআমুল হাসান)।

সূত্র: শেখ জুবায়েরের জীবন, পৃষ্ঠা 156

টেবলীগ জামাতের ইতিহাস
হাজী আবদুল ওহাব

১৯২০-এর দশকমাওলানা ইলিয়াস সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে, এমনকি দারুল উলুমের ছাত্রদের মধ্যে, সাধারণ অজ্ঞতা ও ধর্ম সম্পর্কে উদাসীনতা দেখে হতাশ ছিলেন। একবার একজন যুবককে মাওলানার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল প্রশংসা মন্তব্যসহ যে, তিনি এই-সেই, মক্তবে মেওয়াত এর মধ্যে কোরআন পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন। মাওলানা ইলিয়াস হতবাক হয়েছিলেন এই দেখে যে, তার দাঁড়ি কাটা ছিল এবং তার চেহারা বা পোশাক দেখে কেউ বলতে পারবে না যে, তিনি একজন মুসলমান।

সূত্র: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন ও মিশন – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী

১৯২৬ সালের ২৯ এপ্রিলমাওলানা ইলিয়াস ৪০ বছর বয়সে একাধিক আলেমের সাথে হজ্বে গমন করেন।

সূত্র: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস I/31

মক্কা (পুরানো ছবি)
মক্কার পুরানো ছবি

১৯২৬ সালের জুলাই মাসের ২০ তারিখমাওলানা ইলিয়াসের হজ্ব কাফেলা এই দিন ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু মাওলানা ইলিয়াস এত উদ্বিগ্ন এবং অস্বস্তি অনুভব করছিলেন যে, তিনি মদিনায় আরও সময় কাটানোর প্রবল ইচ্ছা করলেন।

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/31

১৯২৬ – এক রাতে পবিত্র শহর মদিনায়, মাওলানা ইলিয়াস  মসজিদে নববীতে রাসূলের রওজার নিকট ঘুমিয়ে পড়লেন। মাওলানা ইলিয়াস স্বপ্নে দেখেন যে, প্রিয় নবী (সাঃ) তাকে বলছেন “ভারতে ফিরে আসো, কেননা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) তোমার থেকে কাজ নিতে যাচ্ছেন।”

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/31

Tablighi Jamaat History
১৯২০ সালে মসজিদে নববীর ভিতরের দৃশ্য

১৯২৬ নভেম্বরমাওলানা ইলিয়াস হজ্ব থেকে ভারত ফিরে এসে ব্যাপকভাবে তাবলীগের কাজ শুরু করেন ৪০ বছর বয়সে।

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/31

১৯৩০ – ইনআমুল হাসান, যিনি তার ছাত্র ছিলেন (১৩ বছর বয়সী), মাওলানা ইলিয়াসের দাওয়াতের কাজে যোগদান করতে শুরু করেন এবং নিজামুদ্দীনের একজন মুকিম (বাসিন্দা) হিসাবেও।

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/222, 248

১৯৩০ ২৮ এপ্রিলমাওলানা ইলিয়াস দাওয়াতের মেহনত দারুল উলুম সাহারানপুরে (প্রথমবারের মতো) মাদ্রাসার বার্ষিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন।

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/33

Tablighi Jamaat History
মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুর

১৯৩২মাওলানা ইলিয়াস প্রথম দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ শুরু করার ৬ বছর পর প্রথম জামাত গঠিত হয়। ২টি জামাত ছিল:

  • মাওলানা হাফিজ মাকবুলের জামাত – কান্ধালায় পাঠানো হয়।
  • মাওলানা দাউদ মেওয়াতির জামাত – সাহারানপুরে পাঠানো হয়।

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/40

১৯৩৩ ২৫ এপ্রিলমাওলানা ইব্রাহিম দেওলা দেবলা, জামবুসার, ভরুচ জেলা, গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন।

উৎস: মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার বাণী

Tablighi Jamaat History
মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা

১৯৩৪ ২ আগস্ট – এই দাওয়াহর কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে একটি মাশওয়ারা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা ইলিয়াস (৪৮ বছর) এবং মাওলানা জাকারিয়া (৩৬ বছর) মাশওয়ারাটি পরিচালনা করেন। এটি সেই মাশওয়ারা যেখানে তাবলীগের ৬টি সিফাতের বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছিল (এটি উল্লেখযোগ্য যে, মূলত মাওলানা ইলিয়াস এর ৬০টি পর্যন্ত পয়েন্ট/সিফাত ছিল)। বর্তমান সময়ে তাবলীগের ৬টি সিফাত হলো:

১) কালিমা(ঈমান)

২) নামাজ

৩) ইলম ও জিকির

৪) ইকরামুল মুসলিমীন

৫) ইখলাস

৬) দাওয়াত ও তাবলীগ

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, I/36

১৯৩৯ ৮ নভেম্বর – মাওলানা হারুন কান্ধলভী বিন মাওলানা ইউসুফ বিন মাওলানা ইলিয়াস (মাওলানা সা’দের বাবা) জন্মগ্রহণ করেন।

উৎস: মাওলানা হারুনের তাজকিরা, পৃষ্ঠা ২৩

Maulana Haroon (Father of Maulana Saad)
মাওলানা হারূন

১৯৪১ মে ২৮ – মাওলানা তালহা, শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়ার পুত্রের জন্ম হয়।

সূত্র: শেখ জুবায়েরের জীবন, পৃষ্ঠা ১৩৩

মাওলানা জাকারিয়ার বাড়ি যেখানে মাওলানা তালহা জন্মগ্রহণ করেন
শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়ার বাড়ি, যেখানে মাওলানা তালহা জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৪১ নভেম্বর ৩০ – মেওয়াতের প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ২৫,০০০ অংশগ্রহণকারী আসেন। অনেক মহান উলামা এসে উপস্থিত হন, যেমন মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী এবং মুফতি কিফায়াতুল্লাহ

সূত্র: মাওলানা ইলিয়াসের জীবন ও মিশন, পৃষ্ঠা ৬২

১৯৪২ – প্রথমবারের মতো মাস্তুরাতসহ অর্থাৎ নিজেদের মহিলাসহ জামাত গঠন করা হয় যেখানে মাওলানা দাউদ মেওয়াতি ছিলেন আমির। কিছু উলামা, যেমন মাওলানা ইউসুফ এবং মাওলানা ইনআমুল হাসান প্রথমে এ ধরনের জামাতের সম্মতি দেননি। তবে ব্যাখ্যা দেওয়ার পর এবং জামাতের পুরো তত্ত্বাবধান (পরিচালনা পদ্ধতি) জানার পর, তারা সেটিকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেছেন।

সূত্র: সাবিলুল খইরত ফী জামা’তিল মুতানাক্কিবাত, পৃষ্ঠা ২৬২

১৯৪৪ জানুয়ারিহাজী আব্দুল ওয়াহাব (এসময় ২২ বছর বয়সী) প্রথমবারের মতো নিজামুদ্দিন মার্কাজে যান এবং দাওয়ার কাজে যোগ দেন। মাওলানা ইলিয়াসের সাথে তিনি ৬ মাস কাটাতে সক্ষম হন যতক্ষণ না মাওলানা ইলিয়াস ইন্তেকাল করেন।

সূত্র: শেখ জুবায়েরের জীবন, পৃষ্ঠা ১৫৬

১৯৪৪ মে থেকে জুলাই – পুরো মাসজুড়ে মাওলানা ইলিয়াসের অসুস্থতা দিন দিন খারাপ হয়ে ওঠে।

উপস্থিত প্রবীণ এবং বিশিষ্ট পণ্ডিতদের মধ্যে একটি সাধারণ চিন্তার বিষয় ছিল; যদি মাওলানা ইলিয়াস ইন্তেকাল করেন, তাহলে তাঁর মৃত্যুর পর দাওয়াত এবং তাবলীগ জামাতের নেতৃত্ব কে গ্রহণ করবে?

সেই রাতগুলোতে, প্রায় সকল বিখ্যাত বুজুর্গ, যেমন; সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, মাওলানা শাহ আব্দুল কাদের রায়পুরী, মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী, হাফিজ ফখরুদ্দিন, মাওলানা খলিল আহমদ সাহারানপুরী, এবং অন্যান্য পণ্ডিত যারা তাঁকে ভালোবাসতেন, এমন ব্যক্তিরা যারা মাওলানা ইলিয়াসের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সংযুক্ত ছিলেন, রাতটি নিজামুদ্দিন মার্কাে মসজিদে কাটান।

এই বিজ্ঞ ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে, দাওয়াত ও তাবলীগ জামাতের আমিরশিপের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হলেন শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা, অভ্যাস, উচ্চ ডিগ্রী এবং প্রজ্ঞার বিচারে মাওলানা ইলিয়াসের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য যোগ্য।

এরপর সম্মানিত পণ্ডিতগণ শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়ার (৪৬ বছর বয়সী) কাছে এসে তাঁদের মতামত জানালেন। মাওলানা জাকারিয়া বিনয়ের সাথে অস্বীকার করে উত্তর দিলেন, “আপনাদের এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এটার ব্যবস্থা করবেন।”

সূত্র: সাওয়ানেহ হজরতজী সালিস, ১/৬৮

১৯৪৪ জুলাই ১১মাওলানা ইলিয়াস ইন্তেকাল করার দুই দিন আগে, মাওলানা জাকারিয়াকে এবং শাহ আব্দুল কাদের রায়পুরীকে পরামর্শের জন্য ডাকলেন। পরামর্শের সময়, তিনি পণ্ডিত এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সামনে বললেন, “আমার মৃত্যুর পর আমার স্থলাভিষিক্ত হবে যারা, তাদের দ্রুত বাছাই করুন। আমি চাই তারা আমার সামনে বাইয়াত গ্রহণ করুক। আমার পছন্দের ছয়জন রয়েছেন; মাওলানা হাফিজ মাকবুল, মাওলানা দাউদ মেওয়াতী, মাওলানা ইহতিশামুল হাসান, মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী, মাওলানা ইনআমুল হাসান, মাওলানা সাইয়্যেদ রেজা হাসান ভূপালী। ব্যক্তিগতভাবে আমি মাওলানা হাফিজ মাকবুলকে প্রস্তাব করছি, কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই মেহনত এবং ফিকিরে জড়িত আছেন।”

মাওলানা শাহ আব্দুল কাদের রায়পুরী অন্যদিকে মাওলানা ইউসুফকে দাওয়াত ও তাবলীগের পরবর্তী আমির হিসেবে প্রস্তাব করেন। যখন এই দুইটি বিকল্প উপস্থিত হয়, মাওলানা ইলিয়াস বলেন, “যে মেওয়াতিদের ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে” এই সমস্ত বিবেচনায়, মাওলানা আব্দুল কাদের রায়পুরী শেষ পর্যন্ত মাওলানা ইউসুফকে দাওয়াত ও তাবলীগের আমির হিসেবে নির্বাচিত করেন। মাওলানা ইউসুফ তখন ২৭ বছর বয়সী ছিলেন।

মাওলানা ইলিয়াস বলেন, “যদি এটি আসলে আপনার পছন্দ হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনাদের কল্যাণ এবং বরকত দিন। আগে আমার হৃদয় শান্ত ছিল না, কিন্তু এখন আমার আত্মা খুব শান্ত বোধ করছে। আমি আশা করি আমার প্রস্থান করার পর এই কাজটি ভালভাবে চলতে থাকবে।”

এরপর শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া এবং মাওলানা ইলিয়াস মাওলানা ইউসুফকে দেওয়া একটি কাগজে লিখলেন; “আমি আপনাকে মানুষের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করতে অনুমতি দিচ্ছি।”

তথ্য সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/65

মাওলানা ইলিয়াস মাওলানা ইউসুফকে লেখার মাধ্যমে বায়াহ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন
মাওলানা ইলিয়াস মাওলানা ইউসুফকে লেখার মাধ্যমে বাইআত নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন (প্রতীকী ছবি)

১৯৪৪ জুলাই ১৩মাওলানা ইলিয়াস বাংলাওয়ালী মসজিদে ইন্তেকাল করেন এবং বাংলাওয়ালী মসজিদের বাইরে দাফন করা হয়। মাওলানা ইউসুফ দাওয়াত ও তাবলীগের দ্বিতীয় আমির হিসেবে নিযুক্ত হন। শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া উৎসবমুখরভাবে মাওলানা ইলিয়াসের পাগড়ি মাওলানা ইউসুফের মাথায় রাখেন। মাওলানা ইউসুফের প্রথম বয়ান একটি গাছের নীচে, বাংলাওয়ালী মসজিদের উঠানে অনুষ্ঠিত হয়।

তথ্য সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/66

তাবলিগ জামাতের ইতিহাস

তাবলীগ জামাত: মাওলানা ইউসুফের যুগ

১৯৪৬ – মাওলানা ইউসুফ সৌদি আরবে হজ্জ মৌসুমে কাজ করার জন্য প্রথম জামাত পাঠান।

তথ্য সূত্র: সাওয়ানিহ মাওলানা ইউসুফ, পৃষ্ঠা ৪১১

১৯৪৬ – মাওলানা ইউসুফ মাওলানা উবায়দুল্লাহ বেলিয়াবিকে মদিনায় অবস্থান করে আরবদের মধ্যে দাওয়াহের কাজ শুরু করতে পাঠান। পরে মাওলানা সাঈদ আহমদ খান তার স্থলাভিষিক্ত হন।

মাওলানা সাঈদ আহমদ খান

তথ্য সূত্র: মাওলানা জুবায়েরের জীবন, পৃষ্ঠা ১৪৮

১৯৪৭ আগস্ট ১৫ – ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। হাজার হাজার মুসলমান ভয় থেকে ইসলাম ত্যাগ করে। অনেক প্রাণহানি ঘটে। সকল মাশায়েখ আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করেন ও কেঁদে ওঠেন। মেওয়াত থেকে একটি বড় দল নিজামুদ্দীনে আশ্রয় নেয়। হযরতজী মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা মঞ্জুর নূমানী, মাওলানা হাবীবুর রহমান লুদিয়ানভী, এবং মাওলানা জাকারিয়া সিদ্ধান্ত নেন যে, মুসলমানদের ভারত ত্যাগ করা উচিত নয়। তারা হয় সেখানে অবশিষ্ট থাকবে অথবা মারা যাবে। মাওলানা জাকারিয়া ধর্মীয় ফতোয়া পরিষদকে মুসলমানদের ভারত ত্যাগ না করার জন্য ফতোয়া জারি করতে উদ্বুদ্ধ করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই ফতোয়া যদি জারি না করা হতো, তবে হয়তো আজ ভারতে আর কোনো মুসলমান থাকতো না।

তথ্য সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, 1/121, 129

১৯৪৭ সালে ভারত থেকে পালানো মুসলমানদের (ছবি: আমৃতসার রেলপথ হত্যাকাণ্ড)
১৯৪৭ সালে ভারত থেকে পালানো মুসলমানদের (ছবি: আমৃতসার রেলপথ হত্যাকাণ্ড)

১৯৪৭ আগস্ট – মাওলানা ইউসুফ মুরতাদদের ইসলামে ফিরিয়ে আনতে অনেক মজবুত জামাতগুলোকে প্রেরণ করেন। এই জামাতগুলো তাদের জীবনকে উৎসর্গ করতে এবং আল্লাহর পথে শহীদ হতে প্রস্তুত ছিল।

তথ্য সূত্র: সাওয়ানিহ মাওলানা ইউসুফ, পৃষ্ঠা ৩০৬

১৯৪৭ আগস্ট ২৪ – মাওলানা ইউসুফ পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য একটি মজবুত জামাতকে পাঠান সেখানে দাওয়াতের মেহনত স্থাপন করার উদ্দেশ্যে। হাজি আব্দুল ওয়াহাব সাহেব এই জামাতের সদস্য ছিলেন। জামাতটি তাদের বিপজ্জনক যাত্রার বিস্তারিত একটি চিঠি লিখে নিজেরা সিটের নিচে ও টয়লেটে লুকিয়ে ছিল।

হাজী আব্দুল ওয়াহাব (তখন ২৫ বছর বয়সী) এর পরে রাইউন্ড মার্কাজে বসবাস করেন, পাকিস্তানের লাহোরে।

১৯৪৭ সেপ্টেম্বর ১৫ – নামাজের সময় মাওলানা ইউসুফের স্ত্রী সিজদায় ইন্তেকাল করেন। তাদের পুত্র মাওলানা হারুন তখন মাত্র ৮ বছর বয়সী ছিলেন।

তথ্য সূত্র: তৎকালীন মাওলানা হারুন, পৃষ্ঠা ৩১

মাওলানা ইউসুফের স্ত্রী সুঝূদে ইন্তেকাল করেছেন (শিল্পকলা মাত্র)
মাওলানা ইউসুফের স্ত্রী সিজদায় ইন্তেকাল করেছেন (প্রতীকী ছবি)

১৯৪৭ ডিসেম্বর ২৬ – পাকিস্তানের ভারত থেকে বিচ্ছেদের পর প্রথম ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়।

তথ্য সূত্র: সাওয়ানিহ মাওলানা ইউসুফ, পৃষ্ঠা ৩৮০

১৯৪৮ মার্চ ১৩ – পাকিস্তানে একটি ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মাওলানা ইউসুফ পাকিস্তান-ভারত বিচ্ছেদের পর প্রথমবার উপস্থিত হন। এই ইজতিমার সময় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, পাকিস্তানের মার্কাজ হবে রাইবেন্ড, লাহোর।

তথ্য সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/106

১৯৪৮ ডিসেম্বর – শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া ফাজায়েলে সাদাকাত কিতাব লেখা সম্পন্ন করেন।

সূত্র: ফাজায়েলে আমাল নিয়ে আপত্তির উত্তর, পৃষ্ঠা ১৫

১৯৫০ মার্চ ৩০ – মাওলানা জুবায়েরুল হাসান কান্ধলভী বিন মাওলানা ইনআমুল হাসান জন্মগ্রহণ করেন।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ২৯

মাওলানা জুবায়র উল হাসান (তবলিঘি জামাতের ইতিহাস)
মাওলানা জুবায়েরুল হাসান

১৯৫৪ জানুয়ারি ১১ – ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ গঠনের আগে) প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা ইউসুফ এবং মাওলানা ইনআমুল হাসান ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন।

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরত মাওলানা ইউসুফ, পৃষ্ঠা ৩৮৫

১৯৫৪ এপ্রিল ১০ – প্রথমবার রাইবেন্ডে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরত মাওলানা ইউসুফ, পৃষ্ঠা ৩৭৬

১৯৬০ – মাওলানা ইউসুফ হায়াতুস সাহাবা কিতাবের প্রথম কপি প্রকাশ করেন

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/165

১৯৬২ আগস্ট ১৬মাওলানা শাহ আব্দুল কাদের রায়পুরী ইন্তেকাল করেন। তিনি শুধু একজন বিখ্যাত সুফি শাইখ ছিলেন না বরং দিল্লী থেকে সৌদি আরবের তৃতীয় চলমান জামাতের আমিরও ছিলেন, যেখানে সেই জামাতে একজন যুবক মাওলানা সাঈদ আহমদ খানও ছিলেন।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৮৯

মাওলানা শাহ আব্দুল কাদির রায়পুরী (তবলিঘি জামাতের ইতিহাস)
মাওলানা শাহ আব্দুল কাদের রায়পুরী

১৯৬৫ এপ্রিল ১২ – শেখ মাওলানা ইউসুফ শুক্রবার ১৪.৫০ টায় লাহোরে ইন্তেকাল করেন। তিনি তখন ৪৮ বছর বয়সী ছিলেন। মাওলানা ইনআমুল হাসান তার পাশে সূরা ইয়াসিন পড়েন। মাওলানা ইউসুফ তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কালিমায়ে শাহাদাহ পড়তে থাকেন। তাকে তার পিতা মাওলানা ইলিয়াসের পাশে দাফন করা হয়।

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/274

মাওলানা ইনআমুল হাসানের যুগ

১৯৬৫ এপ্রিল ১২ – মাওলানা জাকারিয়া একটি মাশওয়ারার আয়োজন করেন। সেই মাশওয়ারার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় যে মাওলানা ইনআমুল হাসান দাওয়াহ ও তাবলীগের তৃতীয় আমির হিসেবে নিয়োগ পাবেন। মাশওয়ারার ফলাফল মাওলানা ফখরুদ্দিন দেওবন্দীর দ্বারা ঘোষণা করা হয় মাওলানা উমর পালনপুরীর বয়ান (কথা) এর পরে।

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/274

১৯৬৫ এপ্রিলএকটি ফিতনা উদ্ভব হয়েছে। একটি মেওয়াতি সম্প্রদায় ছিল যারা মাওলানা হারুন বিন মাওলানা ইউসুফ (২৬ বছর) কে দাওয়াত ও তাবলীগের পরবর্তী আমির হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। এই গোষ্ঠী, দিল্লীর কিছু মানুষের সাথে মাওলানা জাকারিয়াকে মাশওয়ারার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানায়। তারা চিঠি ও উৎসাহের মাধ্যমে তাকে চাপ দিতে থাকে। তারা হজরত মাওলানা জাকারিয়াকে মাওলানা হারুনের ওপর অত্যাচার করার অভিযোগ পর্যন্ত এনেছিল। মাওলানা জাকারিয়া মাশওয়ারার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। মানুষ বলেছিল: ‘মাওলানা ইনআমুল হাসান মাওলানা ইউসুফের মতো নয়।’ হযরত মাওলানা জাকারিয়া জবাব দিয়েছিলেন, “এটা সত্য, কিন্তু মাওলানা ইউসুফের পর আপনি কখনও তার মতো আমির পাবেন না (মাওলানা ইনআমুল হাসান)।”

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/276, 277

মাওলানা হারুন (তবলিঘি জামাতের ইতিহাস)
মাওলানা হারুন

১৯৬৫ – মাওলানা হারুন স্বীকার করেন – মাওলানা হারুন নিজেই সন্তুষ্ট ছিলেন এবং যারা তাকে আমির করতে চেয়েছিল তাদের চাপ দ্বারা প্রভাবিত হননি। তিনি মাশওয়ারার সিদ্ধান্তকে খোলা মনে গ্রহণ করেন। তিনি মাশওয়ারার সিদ্ধান্ত মানার গুরুত্ব নিয়ে বয়ান দিয়েছেন, এবং যে সিদ্ধান্তই হোক, সেটাই সঠিক।

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, I/277

১৯৬৫ এপ্রিল ৩মাওলানা ইনআমুল হাসানর নিকট বাইআত আরম্ভ হয়েছিল। মাওলানা ইনআমুল হাসানকে দাওয়াত ও তাবলীগের আমির নিযুক্ত করার কারণগুলোর মধ্যে একটি হল, তিনি মাওলানা ইউসুফের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন, শৈশব থেকে মৃত্যু অবধি। তাছাড়া, মাওলানা ইনআমুল হাসান মাওলানা ইলিয়াসেরও একজন সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তিনি মাওলানা ইলিয়াসের বেশিরভাগ দাওয়াতী যাত্রায় সাথে ছিলেন, এজন্য দাওয়াতের কাজের যাবতীয় বিষয় বুঝতে পেরেছিলেন।

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৩১

১৯৬৫ মে ১০মাওলানা সাদ কান্ধলভী (মাওলানা হারুনের পুত্র) জন্মগ্রহণ করেন।

মাওলানা সাদ
মাওলানা সাদ

১৯৬৭ আগস্ট ২১মাওলানা ইনআমুল হাসান দাওয়াত এবং তাবলীগের আমির হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর বিদেশে তার প্রথম দাওয়াতী সফর করেন। এটি শ্রীলঙ্কার ইজতেমা, যা ২৬ থেকে ৩০ আগস্ট কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ১৫৯

১৯৬৭ নভেম্বর – পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ গঠনের আগে) প্রথমবারের মতো টঙ্গী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

উৎস: সাওয়ানিহ হাজরতজী সালিস, II/452

১৯৬৯মাওলানা ইবরাহিম দেওলা ৩৬ বছর বয়সে তুরস্ক, জর্ডান এবং ইরাকের জন্য ১ বছরের খুরুজে যান। খুরুজ ১৯ মাস পর্যন্ত চলেছিল।

উৎস: মাওলানা ইবরাহিম দেওলার আলোচনা, পৃষ্ঠা ৩৬

১৯৭১ মার্চ ২৬ – বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে পৃথকীকরণ। বহু মুসলমান তাদের জীবন হারিয়েছেন।

উৎস: সাওয়ানিহ হাজরতজী সালিস, I/441

১৯৭৩ এপ্রিল ২৩ –শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া ৭৫ বছর বয়সে মদীনা শরীফে চলে যান।

উৎস: মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া কান্ধলভীর জীবন, পৃষ্ঠা ৩০৭।

১৯৭৩ সেপ্টেম্বর ২৮ – মাওলানা হারুন বিন মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী (যিনি মাওলানা সাদের পিতা) ৩৫ বছর বয়সে এক রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান। তার জানাজার নামাজ পড়ান মাওলানা ইনআমুল হাসান, যিনি ৫৫ বছর বয়সী ছিলেন। সেই সময় মাওলানা হারুনের পুত্র মাওলানা সাদ ৮ বছর বয়সের ছিলেন।

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৩৭৯

এটি সন্দেহ করা হয়েছিল যে, মাওলানা হারুন কালো যাদুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, কারণ তিনি মৃত্যুর আগে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। তার রোগটি পূর্ব-লক্ষণ ছাড়াই এসেছিল।

কোনও প্রমাণ ছাড়াই গুজব শুরু হয়েছিল যে, মাওলানা ইনআমুল হাসান নিজেই কালো যাদু পরিচালনা করেছিলেন। মাওলানা ইনআমুল হাসান এই ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে মানসিকভাবে আহত হয়েছিলেন। পরিস্থিতিটি আরও খারাপ হয়েছিল যেহেতু কিছু অভিযোগকারী মাওলানা হারুনের পরিবার থেকেই ছিল, যেমন মাওলানা হারুনের স্ত্রী খালিদাহ (অর্থাৎ মাওলানা সাদের মা)। খালিদাহ মাওলানা ইজহারুল হাসানের কন্যা ছিলেন।

একটি চিঠিতে রেকর্ড করা হয়েছিল যে, এক সময় তিনি ভিত্তিহীন অভিযোগগুলি আর সহ্য করতে পারছিলেন না, তাই তিনি মাওলানা জাকারিয়ার সাথে পরামর্শ করেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মদীনা (সৌদি) চলে যাওয়া তার জন্য একটি ভাল ধারণা হবে কি না, যেমন মাওলানা জাকারিয়া মদীনায় চলে গিয়েছিলেন। মাওলানা জাকারিয়া তাকে ধৈর্য ধরতে এবং নিজামুদ্দিনে অবস্থান করতে বলেন। তিনি এ কথা মেনে নিয়েছিলেন।

১৯৭৪ আগস্ট ৯ – মাওলানা জুবায়েরুল হাসান (যিনি ২৫ বছর বয়সে) এক বছরের জন্য আল্লাহর পথে বের হন।

উৎস: সাওয়ানিহ হাজরতজী সালিস, I/239

১৯৭৮ ফেব্রুয়ারি ১০ – মাওলানা জাকারিয়া (যিনি মদীনায় বসবাস করছিলেন) মাওলানা জুবায়েরুল হাসানকে তাদের তরিকায় (আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি) বায়’আত গ্রহণ করতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি দেন। এই অনুষ্ঠানটি মসজিদে নববীর সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৯৮

মসজিদুন নববী মদীনাহ (পুরাতন ছবি)

মাওলানা জুবায়েরুল হাসান ৪ জন মাশায়েখ থেকে তরিকায় (সুফি আদেশ) খেলাফত (সার্টিফিকেট) অর্জন করেছেন: (১) মাওলানা ইনআমুল হাসান, (২) মাওলানা জাকারিয়া, (৩) মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, এবং (৪) মাওলানা ইফতিখার-উল হাসান। এটি যেকোনো মানদণ্ডেই তাকে তাজকিয়ার জগতে ‘অধিক অর্জনকারী’ করে তুলেছিল তার অত্যন্ত ধার্মিকতা এবং নিবেদনের কারণে।

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ১০৭

১৯৮০ জুলাই ২৭ – মাওলানা হাফিজ মাকবুল ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৩২ সালে মাওলানা ইলিয়াস দ্বারা গঠিত প্রথম জামাতের আমির ছিলেন এবং মাওলানা ইলিয়াসের উত্তরসূরি (পরবর্তী আমির) হিসেবে তার পছন্দের ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তবে, মাওলানা শাহ আবদুল কাদের রায়পুরী মাওলানা ইউসুফকে নির্বাচন করেছিলেন।

উৎস: মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়ার জীবন, পৃষ্ঠা ৩০৮

১৯৮২ মে ২৪ – শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভী ইন্তেকাল করেন (৮৪ বছর বয়সে) তাঁর দাফন হয় মদীনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকী’তে’। যেখানে অসংখ্য সাহাবীদের কবর রয়েছে। তার মুখ থেকে শেষ শব্দ ছিল ‘আল্লাহ আল্লাহ’। তার মৃত্যু হয়েছিল ৫.৪০ মিনিটে মাগরিবের পূর্বে। সেদিন এশার পরেই দাফন হয়।

Tablighi Jamaat History
মদীনার বাকী’ কবরস্থান

১৯৮৩ নভেম্বর ৪ – পাকিস্তানের রাইবেন্ড ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সব মুরুব্বিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই ইজতেমায় মাওলানা ইনআমুল হাসান বিশ্ব মাশওয়ারার সময় তাবলীগের জন্য শুরা ব্যবস্থা রাখার ধারণা প্রথমবার উত্থাপন করেন, যা ইজতেমার এক সপ্তাহ পর ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৩১১, পৃষ্ঠা ৪৫০

এরপর, মাওলানা ইনামুল হাসান ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে শুরাগুলি প্রতিষ্ঠা করেন।

উৎস: মাওলানা শাহিদ সাহারানপুরী কর্তৃক মাওলানা সালিমুল্লাহ খানের কাছে লেখা চিঠি

১৯৯৩ মে ২০ – মাওলানা ইনআমুল হাসানের অবস্থার অবনতি হয়। তিনি মক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সাল থেকে এটি তার অসুস্থ হওয়ার সপ্তম ঘটনা।

উৎস: সাওয়ানিহ হজরতজী সালিস, III/440

১৯৯৩ মে – হজ মৌসুমে, মক্কায়, মাওলানা ইনআমুল হাসান মুফতি জাইনুল আবিদীন, মাওলানা সাঈদ আহমদ খান, হাজী আফজল, হাজী আবদুল মুকীত, হাজী আবদুল ওয়াহাব, এবং আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠের কাছে বলেছেন: “আপনারা জানেন আমার অসুস্থতার কারণে আমার স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে এবং আমার আর সেই প্রাণশক্তি নেই। এই কাজ ইতিমধ্যেই সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন এটি আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। তাই, আমি একটি শুরা গঠন করতে চাই, যা দাওয়াতের কাজকে সহায়তা করবে।

উৎস: দাওয়াত ও তাবলীগ মহান মেহনতের বর্তমান অবস্থা, পৃষ্ঠা ১৫,১৬

১৯৯৩ জুন ১৪ – নিজামুদ্দিন মার্কাজে, সমস্ত জ্যেষ্ঠরা মাওলানা ইনআমুল হাসানের কক্ষে সমবেত হন। তারা ছিলেন: মাওলানা সাঈদ আহমদ খান, মুফতি জাইনুল আবিদীন, হাজী আফজল, হাজী আবদুল মুকীত, হাজী আবদুল ওয়াহাব, মাওলানা ইযহারুল হাসান, মাওলানা উমর পালনপুরী, এবং মাওলানা জুবায়েরুল হাসান।

হজরতজী মাওলানা ইনআমুল হাসান উপস্থিত ব্যক্তিদের বলেছিলেন, “আপনারা ইতিমধ্যে জানেন আমার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখন কেমন। আমার স্বাস্থ্য অব্যাহতভাবে অবনতি হচ্ছে, অথচ এই কাজ ক্রমাগত বাড়ছে। আমি আর একা এই কাজ সামলাতে পারছি না। আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।” তারপর তিনি বলেন, “এখন থেকে আপনারা আমার শুরা। এবং আরও দুইজন যোগ করুন; মিয়াজি মেহরাব এবং মাওলানা সাদ। আল্লাহর ইচ্ছায়, এই দশজন শুরার সাথে এই কাজ ভালভাবে চলতে থাকবে.”

এভাবে শূরা প্রতিষ্ঠিত হয়: (১) মাওলানা সাঈদ আহমদ খান, (২) মুফতি জাইনাল আবিদিন, (৩) হাজী আফজল, (৪) হাজী আবদুল মুকীত, (৫) হাজী আবদুল ওয়াহাব, (৬) মাওলানা ইযহারুল হাসান, (৭) মাওলানা উমর পালানপুরী, (৮) মাওলানা জুবায়েরুল হাসান, (৯) মিয়াজি মেহরাব মেওয়াতি, এবং (১০) মাওলানা সাদ.

উৎস: দাওয়াত ও তাবলীগের আজীম মেহনতের বর্তমান অবস্থা, পৃষ্ঠা ১৬

১৯৯৩ জুন – ফয়সালের পরিবর্তন। শূরা প্রতিষ্ঠার পর, মাওলানা সাঈদ আহমদ খান সকল নিয়োগকৃত শূরার সামনে মাওলানা ইনামুল হাসানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “যখন আপনি এখানে থাকবেন, আপনি আমাদের আমির এবং ফয়সাল। কিন্তু যদি আপনি না থাকেন, আমরা কিভাবে ফয়সালা করব?” মাওলানা ইনামুল হাসান উত্তর দিলেন, “আপনারা নিজেদের মধ্যে পালাক্রমে একটি ফায়সাল (সিদ্ধান্তদাতা) বেছে নিন।”

উৎস: দাওয়াত ও তাবলীগ আজীম মেহনতের বর্তমান অবস্থা, পৃষ্ঠা ১২

মাওলানা সাদকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ, যদিও তিনি কখনো আল্লাহর পথে সময় অতিবাহিত করেননি

মাওলানা ইনামুল হাসান মাওলানা সাদকে শূরায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, কেননা তিনি মেওয়াতী লোকদের থেকে যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে চেয়েছিলেন। আশঙ্কা ছিল মাওলানা ইউসুফের মৃত্যুর পর যে সমস্যাটি ঘটেছিল তা পুনরায় ঘটতে পারে। তখন মাওলানা সাদের বয়স ২৬ বছর ছিল এবং তিনি আল্লাহর পথে কোন সময় অতিবাহিত করেননি, তবুও তাকে বিশ্ব শূরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

আজ পর্যন্ত মাওলানা সাদের কোন সময় কোনো জামাতে অতিবাহিত হয়নি

সূত্র 1: চৌধুরী আমানতুল্লাহর বিশদ ব্যাখ্যা

সূত্র 2: হাজি আবদুল ওয়াহাব সাহেব, রাইবেন্ড ইজতিমা ২০১৭ (মাওলানা সাদ আল্লাহর পথে ৪০ দিনও কাটাননি)

মাওলানা ইনামুল হাসান কখনো নিজের ছেলে মাওলানা জুবায়রুল হাসানকে তার উত্তরাধিকারী করার উদ্দেশ্য রাখেননি। তিনি প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন যে, এই কাজটি বংশ, বংশতালিকা বা আত্মীয়তার উপর ভিত্তি করে নয়, যদিও মাওলানা জুবায়েরুল হাসান পরবর্তী আমিরের জন্য অত্যন্ত যোগ্য ছিলেন। মাওলানা জুবায়েরুল হাসান আল্লাহর পথে একটি বছর কাটিয়েছিলেন। তিনি তার বাবার নানা সফরে অংশ নিয়েছিলেন এবং শাইখুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়ার ছাত্রও ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি তাদের জন্য বাই’আহ গ্রহণের অনুমতি (ইজাজাত) পেয়েছিলেন। সমস্ত যোগ্যতার পরও মাওলানা ইনামুল হাসান তাকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করেননি, বরং একটি শূরা গঠন করেন।

মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা শূরায় নিযুক্ত হননি কারণ তিনি সবসময় নিজামুদ্দিন মার্কাজে উপস্থিত ছিলেন না এবং বেশিরভাগ সময় দীর্ঘ খুরূজে (আল্লাহর পথে) কাটাতেন।

১৯৯৪ মার্চ ৩১ – মাওলানা ইনামুল হাসান স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ায় হায়দ্রাবাদে ইজতিমায় বাই’আত নেয়ার সময় অচেতন হয়ে পড়েন।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ১৪৮

১৯৯৪ জুন ২২ থেকে জুলাই ২ – মাওলানা ইনআমুল হাসান ডিউসবারিতে একটি ইজতিমার জন্য ইংল্যান্ড সফর করেন। এটি ছিল মাওলানা ইনআমুল হাসানের হজ্ব ও উমরা ছাড়া শেষ বিদেশ সফর। প্রায় ৮০,০০০ মানুষ ইজতিমায় উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, III/139

১৯৯৫ মার্চ ২৯ – মাওলানা ইনআমুল হাসান সমস্ত শূরার সঙ্গে হজ পালন করেন। এটি ছিল মাওলানা ইনআমুল হাসানের জীবদ্দশায় শেষ হজ, তিনি ১৭ বার হজ পালন করেছিলেন।

এই হজে একটি মাশওয়ারা হয়েছিল যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, মাওলানা ইনআমুল হাসান এবং সব শুরা শ্রীলঙ্কা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় একটি দীর্ঘ সফরে যাবে।

সূত্র: আহওয়াল ও আসার, পৃষ্ঠা ১৮৩

১৯৯৫ জুন ৬ – মুজফফর নগর, ইউপি, ভারতের ইজতিমা ছিল মাওলানা ইনআমুল হাসানের শেষ ইজতিমা। তার শেষ বয়ানে তিনি প্রথমে যা বলেছিলেন (আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী সাঃ কে সালাম জানানোর পর) “আল্লাহ পরিবার ও বংশের দিকে মোটেই নজর দেননা, আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র ব্যক্তির কাজের দিকে নজর দেন। যদি একজন ব্যক্তির ভালো কাজ থাকে, তবে তিনি আল্লাহ তাআলর কাছে নিকটস্থ। অন্যদিকে, যদি একজন ব্যক্তির কাজ খারাপ হয়, তবে তিনি অবশ্যই আল্লাহ তাআলার থেকে দূরে।”

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, III/365

তাবলীগ জামাত: আলমী (বিশ্ব) শুরার যুগ

১৯৯৫ জুন ১০ – রাত ১.২০ মিনিটে হজরতজী মাওলানা ইনআমুল হাসান ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার শেষ কথা ছিল “আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া।” এবং সেটাই ছিল তার শেষ শ্বাস। তার জানাজায় সারা বিশ্ব থেকে আধা মিলিয়ন মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে ২য় হজরতজী মাওলানা ইউসুফের পাশে দাফন করা হয়।

সূত্র: সাওয়ানিহ হযরতজী সালিস, III/368, 369

১৯৯৫ জুন ১০ থেকে ১২ – পুরো শুরা (ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে) নিজামুদ্দিন মার্কাজে ৩ দিন ব্যাপী একটি মাশওয়ারার জন্য সমবেত হয়েছিল। মাশওয়ারার প্রধান ফলাফল গুলো ছিল নিম্নরূপ:

  • এখন থেকে কাজের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব এক ব্যক্তির উপর থাকবে না; বরং একটি বিশ্ব শুরার দায়িত্বে থাকবে।
  • বিশ্ব শুরার যে সদস্যগণ নিজামুদ্দীনে থাকেন, তারা নিজামুদ্দীন শুরার সদস্য হবেন। তারা সেখানে কাজ পরিচালনা করবেন।
  • বাই’আত (মুরীদ করা) নিজামুদ্দীনে বন্ধ করা হবে।

সূত্র 1: তাবলীগ মার্কাজ নিজামুদ্দীন কিছু বাস্তবতা, পৃষ্ঠা ৩

সূত্র 2: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৪২১

সূত্র 3: ডাঃ খালিদ সিদ্দিকীর চিঠি

সূত্র 4: মাওলানা ইয়াকুবের চিঠি

সূত্র 5: হাজী আবদুল ওয়াহাবের বক্তব্য/চিঠি

হাজী আবদুল ওয়াহাব, তখন ৭২ বছর বয়সী, এই মাশওয়ারার ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে মনে করেন:

“আমরা মাওলানা ইনআমুল হাসানের ইন্তেকালের পর একটি মাশওয়ারায় বসেছিলাম। মাওঃ সাদ বলল যে, “যদি আমাকে আমীর নিযুক্ত করা হয়, তবে যারা মাওলানা জুবায়েরুল হাসানকে চান তারা (এই মেহনত) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আর যদি মাওলানা জুবায়েরুল হাসান আমীর হিসেবে নিযুক্ত হন তবে যারা আমাকে চান তারা (এই মেহনত) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই এই মেহনত মাশওয়ারা দ্বারা পরিচালনা করা উচিত” এবং সেখানে বাইয়াত হবে না, এই বিষয়েও সম্মতি ছিল”

সূত্র: হাজী আব্দুল ওয়াহাব সাহেব (অডিও), রাইবেন্ড, নভেম্বর ২০১৬

১৯৯৫ জুন – তখন যারা মাওলানা জুবায়েরুল হাসানকে পরবর্তী আমীর হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কিছু হতাশার বিষয় ছিল, তার বিভিন্ন যোগ্যতা বিবেচনা করে। তবে মাওলানা জুবায়েরুল হাসান কোন হতাশা প্রকাশ করেননি, বরং তিনি নিজেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে উন্মুক্তভাবে গ্রহণ করেছিলেন, ফলে সেই বিষয় অবশেষে শান্ত হয়ে যায়।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিযামুদ্দীন কিছু বাস্তবতা, পৃষ্ঠা ৩

সেই সময়, মাওলানা সাদ ছিলেন ৩০ বছর বয়সী। মেওয়াতের লোকজন ছাড়া তাবলীগের মধ্যে তিনি তেমন পরিচিত ছিলেন না। তিনি তখনও এসলাহী সফরের (শাইখ হিসেবে দিকনির্দেশনা দেওয়া) অধিকার অর্জন করেননি এবং ইজতেমায় অংশগ্রহণ ছাড়া আল্লাহর পথেও যাননি। এটি লক্ষ্যণীয় যে, তার পূর্ববর্তী সময়ে তিনি হাজী আব্দুল ওয়াহাব এবং চৌধুরী আমানতুল্লাহ (নিযামুদ্দিন মাদরাসার শুরা)এর প্রমাণিত বক্তব্য মতে ৪০ দিনও আল্লাহর পথে কাটায়নি।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিযামুদ্দিন কিছু বাস্তবতা, পৃষ্ঠা ৩

১৯৯৫ – মাওলানা ইনআমুল হাসানের ইন্তেকালের পর কয়েক বছরের মধ্যে মাওলানা সাদ প্রায়ই বলতেন:

দাওয়াতের শত্রু দু্ইজনঃ একজন যিনি আমার পিতা মাওলানা হারূনকে আমীর বানাননি।আরেকজন যাকে আমার পিতার পরিবর্তে আমীর বানানো হয়েছে।”

মাওলানা সাদ, ১৯৯৫

এ ধরনের কথাবার্তা বিষাক্ত ছিল এবং অনেককেই দুঃখ দিয়েছিল।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৪২৫

১৯৯৬ – মাওলানা জুবায়েরুল হাসানকে মাদরাসায়ে কাশিফুল উলুম নিযামুদ্দীনের শাইখুল হাদীস নিযুক্ত করা হয়। যদিও মাওলানা জুবায়ের নিযামুদ্দিনের একমাত্র ব্যক্তি যিনি তার বাবার এবং মাওলানা জাকারিয়ার কাছ থেকে বাইয়াত করানোর অধিকার অর্জন করেছিলেন, তবুও তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত কাউকে বাইয়াত করাননি। তিনি ১৯৯৫ মাশওয়ারার সিদ্ধান্ত/চুক্তিকে সম্মানিত করেছেন.

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ১০৬, পৃষ্ঠা ৪২১

১৯৯৬ – সকল শুরা শ্রীলঙ্কা থেকে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল। এই সফরটি মাওলানা ইনআমুল হাসানের মৃত্যুর আগে এই দেশগুলিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে ছিল। সফরের সময় শুরা সদস্যদের মধ্যে অনেক মাশওয়ারা হয়েছে।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ১৮৩

১৯৯৬ আগস্ট – মাওলানা ইযহারুল হাসান ইন্তেকাল করেন। তিনি নিযামুদ্দিন মারকাজের সবচেয়ে সিনিয়র শুরা ছিলেন। তিনি মসজিদের ইমাম, নিযামুদ্দিন কাশিফুল উলুম মাদরাসার প্রধান শিক্ষক, শাইখুল হাদীস এবং নিযামুদ্দিন মারকাজের ব্যবস্থাপক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর, মাওলানা সাদ মারকাজের তহবিল ও বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণে নেন। আজ অবধি, নিযামুদ্দিন মারকাজের আর্থিক হিসাবগুলি শুধুমাত্র মাওলানা সাদের জানা এবং কখনও অডিট/নিরীক্ষিত হয়নি।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিযামুদ্দিন কিছু হাকায়িক, পৃষ্ঠা ৪

১৯৯৭ মে – মাওলানা উমর পালনপুরী ইন্তেকাল করেন। তাকে প্রায়শই ‘তাবলীগের কণ্ঠস্বর’ বা ‘তাবলীগের মুতাকাল্লিম’ বলা হত।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিযামুদ্দিন কিছু হাকায়িক, পৃষ্ঠা ৫

১৯৯৭ আগস্ট – মিয়াজী মেহরাব ইন্তেকাল করেন। তিনি মাওলানা ইলিয়াসের মাধ্যমে এই মেহনতে লেগেছেন।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিযামুদ্দিন কিছু হাকায়িক, পৃষ্ঠা ৫

১৯৯৮ – সকল শুরা একটি সফরে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে, যেমন; কেনিয়া, মালয়েশিয়া, জাম্বিয়া, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, এবং মরিশাস ইত্যাদি গিয়েছিলেন। সফরের সময় মাশওয়ারার ফায়সাল (সিদ্ধান্তদাতা) সর্বদা তাদের মধ্যে পালাক্রমে ঘুরছিল।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ১৯০

১৯৯৯ অক্টোবর ১৮ – একজন বিশ্ব শুরা সদস্য, হাজী আব্দুল মুকিত বাংলাদেশে ইন্তেকাল করেন। তিনি মাওলানা ইলিয়াসের যুগও পেয়েছিলেন।

সূত্র: মউজূদা আহওয়াল কি ওয়াজাহাত সে মুতাআল্লিক, পৃষ্ঠা ১৩

১৯৯৯ নভেম্বর ১৫ – বিশ্ব শুরা সদস্য, মাওলানা সাঈদ আহমদ খান মদীনাহ মুনাওয়ারায় ইন্তেকাল করেন এবং জান্নাতুল বাকী’-তে দাফন করা হয়।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৩১৯

১৯৯৯ – দশ জন শুরা সদস্যের মধ্যে, ৫ জন ইন্তেকাল করেছেন এবং ৫ জন বেঁচে আছেন, তারা হলেন: মুফতি জাইনুল আবিদীন (পাকিস্তান), হাজী আফজল, হাজী আবদুল ওয়াহাব, মাওলানা সা’দ, এবং মাওলানা জুবায়েরুল হাসান।

১৯৯৯ ডিসেম্বর ৩১মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী ইন্তেকাল করেন। তিনি হিন্দুস্থানের প্রসিদ্ধ আরবি সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি মাওলানা ইলিয়াসের সান্নিধ্যে ছিলেন।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৪০৯

২০০০ – ৫ জন অবশিষ্ট বিশ্ব শুরা সদস্যের সকলে আমেরিকা ও ইউরোপে সফরে গিয়েছিলেন।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৩

২০০১ নভেম্বর ২মাওলানা সা’দের বক্তৃতার প্রথম সমালোচনা মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক উত্তরাবী দ্বারা লেখা একটি চিঠির মাধ্যমে আসে, যা মাওলানা সা’দ, মাওলানা জুবায়েরুল হাসান এবং মাওলানা ইফতেখারুল হাসানের উদ্দেশ্যে ছিল। চিঠিটি মাওলানা সা’দের ২ নভেম্বর ২০০১ তারিখের বক্তৃতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। সেই বায়ানে, মাওলানা সা’দ ঈমান সম্পর্কে ভুল প্রচার করেন। তিনি ‘আল্লাহ বলেছেন …..’,বলে এমন কিছু বলেন যা আল্লাহ তাআলা নিজে কখনও বলেননি! না’উজুবিল্লাহ!

সূত্র ১: মাওলানা সা’দের সাথে উম্মতের উলামাদের মতভেদের মৌলিক কারণ, পৃষ্ঠা ৭,৮

সূত্র ২: মাওলানা সা’দ – বেফাকুল উলামা আল হিন্দ, পৃষ্ঠা ৬-৭

২০০২ – মাওলানা সা’দ মুনতাখাব হাদীস বিতরণ করতে শুরু করেন।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৩৫৯

২০০৪ মে ১৫ – বিশ্ব শুরার সদস্য, মুফতী জাইনুল আবিদীন পাকিস্তান-এ ইন্তেকাল করেন।

সূত্র: তাজকিরা মাওলানা জুবায়ের, পৃষ্ঠা ১২৭

২০০৫ এপ্রিল ১১ – বিশ্ব শুরা সদস্য, পাকিস্তানের হাজী আফজল ইন্তেকাল করেন।

সূত্র: দাওয়াত ও তাবলীগ আজীম মেহনতের বর্তমান অবস্থা, পৃষ্ঠা ১৮

২০০৫ মে– অতঃপর অবশিষ্ট ৩জন বিশ্ব শুরা সদস্য বেঁচে ছিলেন, তারা হলেন: হাজী আবদুল ওয়াহাব, মাওলানা সা’দ, এবং মাওলানা জুবায়েরুল হাসান। হাজী আব্দুল ওয়াহাব তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীন ছিলেন, কারণ তিনি মাওলানা ইলিয়াস-এর সাথী ছিলেন।

মুফতি যাইনুল আবিদীন এবং হাজী আফজলের মৃত্যুর পর, বিভিন্ন পক্ষ থেকে শুরা সদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এ ধরনের প্রস্তাব সবসময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছে।

সূত্র: মাওলানা আহমদ মেওয়াতী, মাওলানা জুবায়েরের খাদেম

২০০৫ – একটি অভিযোগের চিঠি দারুল উলুম দেওবন্দে প্রবেশ করে, যা কানপুরের একজন বিশিষ্ট স্কলার দ্বারা লেখা হয়, যিনি মাওলানা সা’দের বায়ানকে সমালোচনা করেন। চিঠিতে তিনি উপসংহার টানেন যে, এই দাওয়াত ও তাবলীগ জামাত একটি স্বতন্ত্র মতবাদে পরিণত হয়েছে। এই অভিযোগ দেওবন্দের উলামাদেরকে হতবাক করে।

সূত্র: দারুল উলুম দেওবন্দের মাওকিফ, পৃষ্ঠা ১৭

২০০৬ সেপ্টেম্বর ১২মাওলানা সা’দ প্রথমবারের মতো মানুষদের (নিজামুদ্দিন মার্কাজে উপস্থিত) নির্দেশ দেন যে, মুন্তাখাব হাদীস ইজতিমায়ী ভাবে চালু করতে। এটি একটি উচ্চ সতর্কতা ছিল এবং প্রায় সকল প্রবীণরা নিজামুদ্দিনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কাজের তাত্ত্বিক ধাপে এত বড় পরিবর্তন মাশোয়ারা ছাড়া করা হয়েছিল। মাওলানা সা’দ সকল উদ্বেগ উপেক্ষা করে সাথীদেরকে ইজতিমায়ী আমলে মুন্তাখাব হাদীস অন্তর্ভুক্ত করতে জোর দিতে থাকেন।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৪৬০

২০১০ জানুয়ারি – বাংলাদেশের টঙ্গী বিশ্ব ইজতিমা প্রথমবারের মতো দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় অধিক সংখ্যক উপস্থিতির কারণে।

সূত্র: বাংলাপিডিয়া – বিশ্ব ইজতিমা

২০১৪ মার্চ ১৮ – শাইখুল হাদীস মাওলানা জুবায়েরুল হাসান বাংলাওয়ালি মসজিদ নিজামুদ্দীনে ইন্তেকাল করেন, যখন তিনি ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া (RML) হাসপাতাল, দিল্লি-তে ছিলেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৬৩ বছর। যখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল, তিনি বলেছিলেন, “আমার ইহরামের কাপড় আনো, আমি উমরাহ করতে চাই।” তার পরিবার বলেছিল, “না, আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে।” তিনি বললেন, “না, আমি উমরাহ করতে চাই। আমাকে একটি ইহরামের কাপড় দাও।”

মাওলানা জুবায়েরুল হাসান উমরাহ করার উদ্দেশ্যে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। যখন তিনি নিজামুদ্দীন ছেড়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “আসসালামু’আলাইকুম। বিদায় নিজামুদ্দীন।”

তিনি যখন জীবিত ছিলেন, তখন তার একটি প্রার্থনা ছিল “ইয়া আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করো যাতে নিজামুদ্দীন-এ ফিতনা না ঘটতে পারে।”

মাওলানা ইফতেখারুল হাসান কান্ধলভীর (তার মামা) ইমামতিতে তার জানাজার নামাজে হাজার হাজার মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৫

মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের মৃত্যুর পর

আসসালামু আলাইকুম, পড়তে যাওয়ার আগে, অনুগ্রহ করে বুঝুন যে, আমরা তাবলীগের সত্য ইতিহাস সংরক্ষণের প্রতি লক্ষ্য রাখি, সেটা যেমনই হোক না কেন। প্রজন্মের বিচ্ছিন্ন চিন্তা-ধারাকে বিশুদ্ধ চিন্তা-ধারায় পরিবর্তন করে এই ইতিহাস ভুলে যেয়ে আমরা সবাই নেক ও এক হতে চাই । আমরা ঘৃণা প্রচার করি না, এবং অবশ্যই গীবতও করি না। আমাদের নিবন্ধ ‘গীবত বনাম সতর্কতা‘ দেখুন। একজন মুসলিম যতই খারাপ হোক, তিনি এখনও আমাদের মুসলিম ভাই। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই প্রেম এবং ঘৃণা করি।

২০১৪ নভেম্বর – মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর তাবলীগ জামাত বিভাজনের ফিতনা শুরু হয়। বিশ্ব মাশওয়ারাতে হাজী আবদুল ওয়াহাব সিদ্ধান্ত নেন যে, দোয়া ও মুসাফাহা (আল্লাহর পথে বের হওয়ার আগে অনুষ্ঠানিক বিদায়ি হাত মেলানো) যা মাওলানা জুবায়েরুল হাসান সাধারণত করতেন, তার পুত্র মাওলানা জুহায়েরুল হাসান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, তার বাবার ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে। মাওলানা সাদ এই সিদ্ধান্তে অত্যান্ত দুঃখিত ছিলেন।

রাইবেন্ড ইজতেমাতে, সকল বয়োবৃদ্ধদের সামনে মাওলানা সাদ আবারও মাওলানা জুহায়েরের সাথে মুসাফাহা ভাগাভাগি করার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি কাউকে নিজের সাথে ভাগাভাগি করতে চাননি। বিস্তারিত: পড়ুন: মাওলানা সাদ আক্রমণাত্মকভাবে মুসাফাহার দাবি করেন

উৎস: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৭৬

আরও বিস্তৃত তথ্যের জন্য দেখুন: তাবলীগ জামাতের বিভাজনের ৩টি কারণ

২০১৪ ডিসেম্বর – ভুপাল ইজতেমাতে যখন লোকেরা মাওলানা জুহায়েরকে মুসাফাহার জন্য মঞ্চে বসতে বললেন, মাওলানা সাদ এতটা রাগান্বিত হন যে, তিনি মঞ্চ ছেড়ে চলে যান।

উৎস: তাবলিগী মার্কাজ নিজামুদ্দীন কিছু কথা

২০১৪মাওলানা সাদ নিজে নিজামুদ্দিন মার্কাজে বাই’আত গ্রহণ শুরু করে বিশৃঙ্খল আচরণ করেছিলেন । এটি ছিল ১৯৯৫ সালের মাশোয়ারার সরাসরি লঙ্ঘন। যা আরো উদ্বেগজনক ছিল, তা হলো তিনি মাওলানা ইলিয়াস-এর নাম নিয়ে বাই’আত করছেন, যার সাথে তার কখনো দেখাই হয়নি বা ইজাজত ই (অনুমতি) পাননি।

উৎস: মওজুদাহ আহওয়াল কী ওজাহাত সে মুতাআল্লিক, পৃষ্ঠা ২১

২০১৪ – মাওলানা সাদ অনেকগুলো বক্তৃতা দেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন, যাতে উলামাদের সমালোচনা করতেন। এই বক্তৃতাগুলি খুব সমালোচিত হয়েছিল। অনেক পত্র মহামান্য দারুল উলূম দেওবন্দে আসলো, যা মাওলানা সাদের ইজতেমাতে বক্তৃতার সমালোচনা করেছিল এবং তার সাধারণ কথাবার্তা সম্পর্কে। তার বক্তৃতার বিষয়বস্তু উলামাদের ইজমার বিরোধী ছিল এবং প্রায়ই গুলু’ (ইসলামে বাড়াবাড়ি) দ্বারা পূর্ণ ছিল।

দারুল উলূম দেওবন্দ একটি তদন্ত করেছিল, যা কয়েক বছর ধরে চলে। প্রথমে তারা মাওলানা সাদের অপরাধের প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা একটি চিঠি পাঠায় মাওলানা সাদকে। তাকে সতর্ক করার জন্য, যাতে ফাতওয়া প্রকাশের আগে তারা তার সম্মান এবং দাওয়াতের কাজের ভালো ইমেজ রক্ষায় চেষ্টা করে। তারা একটি দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে, কিন্তু মাওলানা সাদ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।

উৎস: মাওকিফ দারুল উলূম দেওবন্দ, পৃষ্ঠা ৫, ২০

২০১৪ থেকে ২০১৫ – নিজামুদ্দিন মার্কাজের সকল সিনিয়র মুরুব্বিরা মাওলানা সাদ-কে সতর্ক করে বলেছিলেন যে, বিশেষ করে জনসমক্ষে বয়ান দেওয়ার সময়, কথা বলার সময় সতর্ক থাকতে। দাওয়াত ও তাবলীগের একটি মৌলিক নীতি হলো- সাম্প্রতিক বিষয়গুলি আলোচনা না করা, বা ফাতাওয়া (ইসলামী আইনব্যবস্থা) নিয়ে আলোচনা না করা এবং চারটি বিষয় এড়ানো, যা হলো ‘তুলনা করা’ (তাকাবুল), ‘সংবেদনশীল’ (তানকিশ), ‘সমালোচনা’ (তানকিদ) এবং ‘অস্বীকার করা’ (তারদিদ)।

মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা (৮২ বছরের বয়স্ক), যিনি মাওলানা সাদের শিক্ষক ছিলেন, তিনি সব সময় মাওলানা সাদকে তার বয়ান দেওয়ার আগে মাশওয়ারা করার জন্য ডাকতেন। দুর্ভাগ্যবশত, মাওলানা সাদ কখনো শোনেননি।

মাওলানা সাদ তার উপর সমালোচনাগুলি নিয়ে অস্বস্তি অনুভব করছিলেন। তিনি তার হিরাসাহ(পাহারা )এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দুই মাসের একটি তারতীব শুরু করেন। এ উদ্দেশ্যে অনেক অজানা যুবক মেওয়াত থেকে এসেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আল্লাহর পথে এক দিনও অতিবাহিত করেনি। তারা খুব কম শিষ্টাচার দেখায় এবং একটি গুন্ডা-সুলভ আচরণ করে। তাদের সংখ্যা শতাধিক ছিল। তাদের কাজ ছিল মাওলানা সাদকে আনা-নেওয়া করা, তার সাথে কাউকে না থাকতে দেয়া এবং তার পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করা।

উৎস: তাবলিগী মার্কাজ নিজামুদ্দীন উদ্দিন কিছু কথা পৃষ্ঠা ১৩

২০১৫ আগস্ট ১৮ – উত্তর প্রদেশে পুরানো সাথীদের জোড় শেষে মাওলানা সাদের গার্ডরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তারা মাওলানা জুহায়েরুল হাসানের সাথে মুসাফাহা ( হাত মেলানো) করার ইচ্ছা প্রকাশকারী লোকদের নিষেধ এবং উৎখাত করে।

বিস্তারিত: মাওলানা সাদ আক্রমণাত্মকভাবে মুসাফাহার দাবি করেন)

উৎস: তাবলিগী মার্কাজ নিজামুদ্দিন কিছু বাস্তবতা, পৃষ্ঠা ১০

২০১৫ আগস্ট ২০ শবগুজারি রাতে নিজামুদ্দিন মার্কাজ এ, দিল্লির দায়িত্বশীল ভাইদের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেই সময় নিজামুদ্দিন মার্কাজে দিল্লির লোকেদের সঙ্গে মাওলানা সাদের গার্ডদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। মাওলানা সাদের গার্ডরা এই চরম সন্দেহের মনোভাব গ্রহণ করেছে। যখনই কোন ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু প্রমাণ আসে, যিনি মাওলানা সাদকে খারাপভাবে উল্লিখিত করেন, সেই ব্যক্তিকে প্রহার করা হয়।

সূত্র: তাবলিগ মার্কাজ নিজামুদ্দিনের কিছু বাস্তবতা, পৃষ্ঠা 10

২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট – পরিস্থিতি যখন আরো বেশি বিশৃঙ্খল হয়ে যায়, তখন সিনিয়র বুযুর্গদের একটি দল (যাদের মধ্যে মাওলানা ইবরাহিম দেওলা ও প্রফেসর সানাউল্লাহ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন) মার্কাজ মাশওয়ারার সময় নিজেদের উদ্বেগ জানাতে গিয়েছিল, যা পরিচালনা করে ছিলেন মাওলানা সাদ। তারা নিজামুদ্দিন মার্কাজ নিয়ন্ত্রণকারী দাঙ্গাবাজদের সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপন করেন। তবে, তারা কথা বলার আগেই সরাসরি সমালোচনা ও হুমকি পাওয়া শুরু হয় এবং একটি হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। তখন মাওলানা সাদ ঘোষণা করেন, “..আমি আমির। আল্লাহর কসম, আমি উম্মাহর আমির…” একজন মুমিন বলেন, “আপনাকে আমির কে বানিয়েছে?” তিনি চুপ ছিলেন। তারপর লোকেরা বলেন, “আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।” তিনি রেগে বলেন, “আমি আমির, না মানো তবে তোমরা জাহান্নামে চলে যাও…!”

সূত্র: মাওলানা সাদ নিজেকে উম্মাহর আমির দাবি করেন, অডিও রেকর্ডিং

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর – ফজরের বয়ানে মাওলানা সাদ বলেন, “এই ঘরটির চারটি দেয়ালের মধ্যে, আমি ছাড়া আর কেউ আমির নেই।” তাঁর বক্তব্যের বিরোধীতা করেন মাওলানা ইয়াকুব পরবর্তী বয়ানে। পরদিন, মাওলানা সাদ বয়ান দিতে ফিরে আসেন এবং বলেন, “যে ব্যক্তি বলেছিল এখানে আমির নেই (মাওলানা ইয়াকুবকে নির্দেশ করে), সে মজনু (পাগল)। এখানে আমিই আমির।”

মনে রাখবেন: মাওলানা ইয়াকুব শুধু মাওলানা সাদের শিক্ষকই নন, বরং তাঁর বাবার, মাওলানা হারুনেরও শিক্ষক ছিলেন.

সূত্র: মওজুদাহ আহওয়াল কি ওয়াজাহাত সে মুতাআল্লিক, পৃষ্ঠা 23

২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর – মাওলানা সাদের প্রতি বিভিন্ন পরামর্শ এবং সতর্কতা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয়। এর ফলস্বরূপ, নিজামুদ্দিন মারকাজের বুযুর্গরা একত্রিত হন। তারা মাওলানা সাদের কাছে একটি চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নেন। চিঠির মধ্যে, তারা নিজামুদ্দিনের পরিস্থিতি, উলামাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছে এমন তাঁর বিতর্কিত বক্তৃতা ও নীতিগুলি ইত্যাদি সম্পর্কে উদ্বেগ উল্লেখ করেন।

চিঠিটি স্বাক্ষর করেন; ডঃ খালিদ সিদ্দিকী, ভাই ফারুক আহমেদ বেঙ্গালুরু, প্রফেসর সানাউল্লাহ, প্রফেসর আবদুর রহমান, মাওলানা ইসমাইল গোদ্রা, এবং মাওলানা আবদুর রহমান।

সূত্র: মওজুদাহ আহওয়াল কি ওয়াজাহাত সে মুতাআল্লিক, পৃষ্ঠা ২৩

২০১৫ নভেম্বর ৫ রাইবেন্ড ইজতিমা, পাকিস্তান। নিজামুদ্দিন মার্কাজের উপর ছড়িয়ে পড়া বিশৃঙ্খলাকারী পরিস্থিতির কারণে অনেক বুযুর্গ একমত হন যে, এটি নিষ্পন্ন করার উপায় হল একটি শক্তিশালী আলমী শুরা এবং নিজামুদ্দিনের শুরার নির্মাণ।

সূত্র: দাওয়াত ও তাবলীগ আজীম মেহনতের মওজুদাহ অবস্থা, পৃষ্ঠা 19

২০১৫ নভেম্বর ১৫হাওয়েলিতে একটি মাশওয়ারা অনুষ্ঠিত হয়। হাওয়েলি হল একটি ভবন যেখানে বার্ষিক রাইবেন্ড ইজতিমায় সব বুযুর্গদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। যারা উপস্থিত ছিলেন তারা প্রায় ৩০ জন রাইবেন্ড মার্কাজের, ২০ জন নিজামুদ্দিন মার্কাজের, বাংলাদেশের প্রায় ৭-১০ জন এবং হাজী মুমতাজের নেতৃত্বে ৫ জন ছিলেন। হাজী মুমতাজ হলেন মাওলানা সাদের শিশু বয়সে বহু বছর তাঁর পরিচরকারক/শিক্ষক।

সূত্র: মওজুদাহ আহওয়াল কি ওয়াজাহাত সে মুতাআল্লিক, পৃষ্ঠা 25

হাজী আবদুল ওয়াহাব, যিনি মাশওয়ারার ফায়সাল (নির্ধারণকারী চেয়ারপারসন) ছিলেন, নতুন সদস্য যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন আলামী শুরাতে। নতুন শুরা সদস্যরা হলেন:

1. হাজী আঃ ওয়াহাব (রাইবেন্ড) ৯৩ বছর

2. মাওলানা সাদ(নিজামুদ্দীন) ৫০ বছর

3. মাওঃ ইব্রাহিম দেওলা(নিজামুদ্দীন)৮২বছর

4. মাওলানা ইয়াকূব (নিজামুদ্দিন)

5. মাওলানা আহমাদ লাট (নিজামুদ্দিন)

6. মাওলানা জুহায়েরুল হাসান (নিজামুদ্দিন)

7. মাওলানা নাজরুর রহমান (রাইবেন্ড)

8. মাওলানা আবদুর রহমান (রাইবেন্ড)

9. মাওলানা উবায়দুল্লাহ খুরশীদ (রাইবেন্ড)

10. মাওলানা জিয়াউল হক (রাইবেন্ড)

11. মাওলানা জুবায়ের (কাকরাইল)

12. মাওলানা রবিউল হক (কাকরাইল)

13. ভাই ওয়াসিফুল ইসলাম (কাকরাইল)

একটি চুক্তি তৈরী করা হয় এবং সব সদস্য দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়, তবে মাওলানা সাদ এবং ওয়াসিফুল ইসলামের স্বাক্ষর ছিল না।

চুক্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছিল যে, নিজামুদ্দিনের ভিত্তিতে শুরা সদস্যরাও নিজামুদ্দিনের শুরা হবে।

সূত্র: দাওয়াত ও তাবলীগ আজীম মেহনতের মওজুদাহ অবস্থা, পৃষ্ঠা ১৯,২০

মাওলানা সাদ বিশ্ব শুরা এবং নিজামুদ্দিনের শুরায় সদস্য যুক্ত করার প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন, যদিও হাজআবদুল ওয়াহাব বৈঠকের ফায়সাল (নির্ধারণকারী) ছিলেন এবং উপস্থিত অধিকাংশ লোক একমত ছিলেন।

মাওলানা সাদ প্রত্যাখ্যান করলেন এবং হাজী আবদুল ওয়াহাবকে বললেন, “এটি অপ্রয়োজনীয়। আমি এতে সম্মত নই। শুরাকে নির্ধারণ করার আপনার কি অধিকার আছে? আপনার কোনও অধিকার নেই! এই বিষয়ে এখানে আলোচনা করা উচিত নয়। এই বিষয়টি নিজামুদ্দিনে আলোচনা করা উচিত!” হাজী মুমতাজ, যিনি মাশওয়ারায়ও উপস্থিত ছিলেন, প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনি আমাদের বলেছিলেন যে, নিজামুদ্দিন মার্কাজে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি একটি বড় মাশওয়ারায় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অথচ এখন আপনি বলছেন যে, শুরার বিষয়ে এখানে আলোচনা করা উচিত নয়, এটি কিভাবে?”

মাওলানা সাদ বললেন, “অলরেডি (নিজামুদ্দিন মার্কাজে) একটি শুরা রয়েছে।” যখন শুরার সদস্য কারা এই প্রশ্ন করা হয়, মাওলানা সাদ জবাব দিলেন: “আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এসে তৈরি করব।” মাওলানা সাদ তারপর বলেন হাজী আবদুল ওয়াহাবকে, আমি আর আপনাকে অনুসরণ করতে চাই না!” হাজী মুমতাজ (যিনি মাওলানা সাদের বহু বছর যত্ন নিয়েছেন) তাঁর পালিত ছেলেদের নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এরপর মাওলানা সাদ নিজেকে উম্মাহর আমির ঘোষণা সম্পর্কে তাকে মাশওয়ারায় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (২৩/৮/২০১৫)। মাওলানা সাদ এটি অস্বীকার করেছিলেন। তার বক্তৃতার একটি অডিও রেকর্ড পরে দেখানো হয়েছিল, যেখানে তিনি স্বীকার করেন যে, সে সময় তিনি ক্রুদ্ধ ছিলেন।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিজামুদ্দিন কিছু তথ্য, পৃষ্ঠা ১৪

বিশ্ব শুরার নতুন নিয়োগ উপস্থিতদের ইজমা/সম্মতির মাধ্যমে অনুমোদিত হয় এবং হাজী আব্দুল ওয়াহাবের ফয়সালায়। এগারোটি নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যেকে তাদের স্বাক্ষর প্রদান করেছে, শুধু মাওলানা সাদ এবং ওয়াসিফুল ইসলাম ব্যতীত।

সূত্র: বিশ্ব /আলমি শুরার নিয়োগ পত্র ২০১৫

২০১৫ নভেম্বর ১৬ – হতাশ এবং ক্রুদ্ধ মাওলানা সাদ ক্রুদ্ধ হয়ে অন্য বুযুর্গদের পূর্বে রাইবেন্ড ত্যাগ করেছিলেন।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিজামুদ্দিন দিল্লি কিছু তথ্য কিছু ঘটনা, পৃষ্ঠা ১১

২০১৫ নভেম্বর ১৭ – মাওলানা সাদ নিজামুদ্দিন মারকাজে তার সমস্ত অনুসারীদের জড়ো করে এবং তাদের সামনে বলেন: “সেখানে (রাইবেন্ড ইজতিমা) কোন শুরা গঠন ছিল না। সেখানে আমি অপমানিত হয়েছিলাম। দিল্লির কিছু কর্মীরা আমাকে অপমানিত করেছিল। তোমরা সবাই তাদের বয়কট করো।”

মাওলানা সাদ এতটাই দুঃখিত এবং ক্রুদ্ধ ছিলেন যে, তিনি নিজামুদ্দিন মারকাজে কয়েকদিনের জন্য কোন জামাত প্রবেশের অনুমতি দেননি। এটি ছিল নিজামুদ্দিন মারকাজের ইতিহাসে প্রথম ‘স্ট্রাইক’ কারণ এর আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। মাওলানা সাদ দিল্লির মসজিদগুলোতে ঘোষণা করার নির্দেশও দেন যে, অস্থায়ীভাবে নিজামুদ্দিন মারকাজে না যাওয়ার জন্য। নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত, নিজামুদ্দিন মারকাজ খুবই নিরব ছিল এমনকি তার শবগুজারি রাতেও এবং শুধুমাত্র বিদেশিদের দ্বারা পরিদর্শিত হয়েছিল।

সূত্র ১: ড. খালিদ সিদ্দিকীর সাক্ষ্য – মজমুআ খুতূত পত্র ৮

সূত্র ২: তাবলীগি মার্কাজ হজরত নিজামুদ্দিন দিল্লি কিছু তথ্য কিছু ঘটনা (পৃষ্ঠা ১২)

২০১৫ ডিসেম্বর ৬ – এক মাসও হয়নি মাওলানা সাদ নিজামুদ্দিন মারকাজের জন্য নিজের শুরা গঠন করেছেন, যদিও তিনি এর আগে দৃঢ়ভাবে এর বিরুদ্ধে ছিলেন। শুরায় তার ২২ বছর বয়সী ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং নিজে একমাত্র আমির হয়ে, কোনও পরিবর্তনশীল ফায়সাল ছাড়াই। তারা ছিলেন: (১) মাওলানা সাদ, (২)মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা, (৩) মাওলানা ইয়াকুব, (৪) মাওলানা আহমদ লাট, (৫)মাওলানা যুহায়েরুল হাসান, (৬) মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ, (৭) মাওলানা আব্দুস সাত্তার, (৮) মিয়াজি আজমাত (৯) ড. আবদুল আলিম।

সূত্র: তাবলীগি মার্কাজ হজরত নিজামুদ্দিন দিল্লি কিছু তথ্য কিছু ঘটনা, পৃষ্ঠা ১২

২০১৫ ডিসেম্বর – এই মাস জুড়ে, মাশওয়ারাবিহীন, মাওলানা সাদ কিছু এলাকায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরিবর্তন করে তার পছন্দের লোকজনকে বসিয়ে দেন। তিনি তাদের বরখাস্ত করেন, যারা তার সঙ্গে ছিলেন না।

সূত্র: তাবলীগি মার্কাজ হজরত নিজামুদ্দিন দিল্লি কিছু তথ্য কিছু ঘটনা, পৃষ্ঠা ১২

মাওলানা সাদের অনুসারীরা একটি ভিত্তিহীন কাল্পনিক কথা তৈরি করেন যে, গুজরাটের লোকেরা; যার মধ্যে মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা, মাওলানা আহমদ লাট, এবং অন্যান্যরা, নিজামুদ্দিন মারকাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং মাওলান সাদ থেকে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। এটি বিপদজনক এবং ভিত্তিহীন অপবাদ ছিল, কারণ প্রথমবারের মতো ক্ষমতা চাওয়া এবং একটি নির্দিষ্ট জাতিকে অনুকূল করার বানোয়াট দায় তার অনুসারীরা প্রবীণ বুযুর্গদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল।

এখান থেকে, মিথ্যা, অপবাদ, বিভ্রান্ত তথ্য, এবং সহিংসতা মাওলানা সাদের অনুসারীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

সূত্র: তাবলীগি মারকাজ নিজামুদ্দিন কিছু তথ্য, পৃষ্ঠা ১৩

নিজামুদ্দিনের রক্তপাতের পর

২০১৬ জুন ১৯ – ১৩ রমজান ১৪৩৭ – নিজামুদ্দিন মারকাজে প্রথম রক্তপাত ঘটেছে। মাওলানা সাদের অধীনে একটি দাঙ্গাকারী গোষ্ঠী নিজামুদ্দিন মারকাজ পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একটি সুকৌশলে তৈরি পরিকল্পনায়, বেশিরভাগ বিদেশীদেকে প্রথমে জামাতে পাঠানো হয়েছিল। বাকিদের নিচে নামতে দেওয়া হয়নি। সামনের গেট ভিতরের দিক থেকে বন্ধ ছিল।

এটি ইফতারের ঠিক পর ছিল (রমজান মাসে পানাহার ভঙ্গ করা)। হঠাৎ করেই, প্রায় একশ’ গুণ্ডা নিজামুদ্দিন মারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যারাই মাওলানা সাদের পক্ষপাতী ছিল না, তাদেরকে বাজেভাবে পিটানো হয়। কিছু বুযুর্গের কক্ষগুলো ধ্বংস করা হয় এবং এমনকি আসবাবপত্রও নষ্ট হয়ে যায়।

হাফেজ আদনান (মাওলানা আহমদ মাধীর পুত্র) মারাত্মকভাবে পিটানো হয়েছিল

কমপক্ষে ১৫ জন লোক মাওলানা জুহায়েরের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর করে। বাড়ির দরজা টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। এই ভয়ঙ্কর পরিবেশে মাওলানা জুহায়রুল হাসান তারাবীহ নামায পড়ানোর জন্য মসজিদে যেতে পারেননি। তার পরিবার পুরো রাত আতঙ্ক ও ভয়ের অবস্থায় কাটিয়েছে; পরদিন সাহরির জন্য কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।

এই কিছু লোক প্রথম তলায় পৌঁছায় (যেখানে মাওলানা ইয়াকুব এবং মাওলানা ইব্রাহিমের কামরা ছিল), দুটি ঘরের তালা ভেঙে দেয় এবং ভিতরের জিনিসপত্র চুরি করে। এই ঘরগুলির একটি মাওলানা আহমদ লাটের অতিথিদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল। যখন মাওলানা আহমদ লাট এই খোলা বর্বরতার কথা জানলেন, তিনি পরদিনই চলে যান এবং তার নিজের শহরে ফিরে যান, অথচ ইনিও মাওলানা সাদের হাদীসের শিক্ষক ছিলেন।

রক্ত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে । নিজামুদ্দীন মার্কাজের আবাসিক কমপ্লেক্সের ভেতর থেকে মহিলাদের চিৎকার ও ভীতসন্ত্রস্ত শিশুদের কান্না শোনা যাচ্ছিল। গ্যাংস্টাররাও নিজামুদ্দীন মার্কাজের বাইরের দোকানগুলোতেও গিয়েছিল। গুজরাটি সংশ্লিষ্ট বা তাদের মালিকানাধীন যেকোনো দোকান লুটপাট ও ধ্বংস করা হয়েছিল। এই হট্টগোলের কারণে কয়েকজন আহত হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছু এত মারাত্মকভাবে মারা হয় যে, তাদের আইসিইউতে পর্যন্ত নিতে হয়।

পুলিশ এসে নিজামুদ্দীন মার্কাজ অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। এই দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে, মাওলানা সাদ প্রায় কিছুই করেননি। তিনি উল্টো পুলিশকে তার সাথে একমত না থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন। তার বর্ণনা ঘটনার সাথে সামান্যতম মিলছিল না, ভুক্তভোগীদের প্রতি ন্যায়বিচার দেওয়া তো দূরের কথা।

এই দিনেই নৈতিকতা, ইকরামুল মুসলিমিন, করুণা, ভালোবাসা, এবং মুসলিম ভাইদের সম্মান টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

উৎস: তাবলিগী মার্কাজ হজরত নিজামুদ্দিন দিল্লী কিছু হাকাইক কিছু ওকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৩।

নিজামুদ্দিনের প্রথমবারের মতো রক্তপাত দেখুন: সেই দিন আমাদের মুরুব্বিরা চলে গেল।

২০১৬ জুন ২০– স্থানীয় সংবাদপত্র ও মিডিয়া ‘নিজামুদ্দিনে রক্তপাত’ শিরোনামে দ্রুত পূর্ণ হয়ে ওঠে।

একজন ভুক্তভোগী ছিলেন মাওলানা উবায়দুল্লাহ বেলিয়াবির পরিবারের একজন সদস্য, যিনি ঘটনাটি সম্পর্কে একটি অডিও বিবৃতি দেন। একজন ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং প্রতিশোধস্পৃহার কারণেই নিজামুদ্দীন মার্কাজের সম্মান টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

কয়েকজন আলেম মাওলানা সাদের কাছে গিয়েছিলেন, যার মধ্যে মুফতি আবুল কাসেম নূমানী(দেওবন্দের মুহতামিম)এবং মাওলানা সালিমুল্লাহ খাঁনও ছিলেন। এমনকি মাওলানা আরশাদ মাদানী (দারুল উলুম দেওবন্দের সুপরিচিত সিনিয়র মুফতি) রমজানের শেষ দশ দিন তার ইতিকাফ ভেঙে মাওলানা সাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন এই সমস্যা সমাধান করতে। তাদের সব উপদেশ মাওলানা সাদ দ্বারা উপেক্ষা করা হয়। তারা সবাই গভীর হতাশা নিয়ে ফিরে আসেন। মাওলানা আরশাদ মাদানী নিজেও একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে দাবি করেছিলেন যে “এটি স্পষ্ট যে, মাওলানা সাদ সঠিক তারবিয়াত (ভাল চরিত্র) অর্জন করেননি

উৎস ১: তাবলিগী মারকাজ হজরত নিজামুদ্দীন দিল্লী কিছু হাকাইক কিছু ওকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৩,১৪।

উৎস ২: মাওলানা আরশাদ মাদানী অডিওতে ৫:২৬ “মাওলানা সাদ সঠিক তারবিয়াহ পাননি”

২০১৬ জুলাই ১৭ – যেহেতু সমস্ত উপদেশ মাওলানা সাদ দ্বারা উপেক্ষা করা হয়েছে, কিছু সিনিয়র মুরুব্বিরা মাওলানা সাদকে একটি চিঠি লিখেন। চিঠির বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে রয়েছে:

“গত এক শতাব্দী ধরে নিজামুদ্দীনের সম্মান সাম্প্রতিক ঘটনাটির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ভুলভাবে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যখন এটি প্রকৃতপক্ষে একজন একক ব্যক্তির অগ্রহণযোগ্য উদ্ভাবন এবং কাজের সঠিক ও অনুমোদিত প্যাটার্নের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এতকাল আমরা এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি, কিন্তু এখন আপনার অনুসারীরা এই বিষয়টি বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে যারা সহিংসতা করে এবং যারা যারা আপনার সাথে একমত নয় তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। সমস্যাটির মূল হলো, মাওলানা ইউসুফ এবং মাওলানা ইন’আমুল হাসানের সময় থেকে যারা কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা অনুমোদিত ও মূল প্যাটার্ন ও নাহাজ/পদ্ধতি অনুসারে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, শুরার (অনুমোদিত) তত্ত্বাবধানে, যখন আপনার অনুসারীরা আপনার অচল নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

মাওলানা ইলিয়াস সর্বদা অনুভব করতেন যে, যদি মেহনত একজন একক আমিরের অধীনে চালিয়ে যাওয়া হয় তবে তা অসুস্থকর। কেউও অসম্পূর্ণতার বাইরে নয়, এবং সময়ের সাথে সাথে, এই অসম্পূর্ণতাগুলি বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সমস্যার সমাধানের জন্য, মাওলানা ইলিয়াসের পরামর্শ অনুযায়ী, একটি বিশেষ জামাত (লোকদের একটি দল) থাকা উচিত, যেখানে কাজটি তার নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধানে চালিয়ে যাবে। এই হল আমাদের অবস্থান এবং স্থানীয় ও বিদেশী মুরুব্বিদের অবস্থান। আপনি যে উদ্ভাবনগুলি চালু করেছিলেন, তা কখনো অনুমোদিত ছিল না এবং পূর্ববর্তী ৩ হাজরতজির (নেতাদের) সময়ে ছিল না। আমরা এই সমস্যা নিয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি বারবার যেমন এটি ইতিমধ্যে আমাদের বিভক্ত করে দিচ্ছে। আল্লাহ আমাদের সেই সংকট থেকে রক্ষা করুন যা মাওলানা ইলিয়াস আমাদের সতর্ক করেছিলেন: ‘যদি এই কাজের শরিয়ত সম্মত উসূল (নিয়ম) লঙ্ঘন করা হয়, তবে বছরব্যাপী আসা ফিতনা কয়েক দিনের মধ্যে এসে যাবে’। লক্ষণগুলি এখন দৃশ্যমান।

দ্বিতীয়ত, আপনি আপনার বক্তৃতাগুলিতে এমন বিবৃতিগুলি করেছেন, যা মাজহাব এবং ইজমা (ফকীহদের বৃহত্তম সম্মতি) এর সাথে সাংঘর্ষিক। এই বিবৃতিগুলি আপনার অনুসারীদের দ্বারা প্রতিধ্বনিত এবং অনুশীলন করা হয়। উলামাগণ এই মেহনত যে দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। আপনারাও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং কিছু ব্যক্তিত্বকে সমালোচনা করেন। আমাদের পূর্ববর্তী মুরুব্বিরা সবসময় আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন এমন যেকোনো মন্তব্য পরিহার করতে যা অন্যদের সমালোচনা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং নেতিবাচকভাবে তুলনা করে। যাতে এই মেহনত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

আল্লাহ তাআলা এই মেহনতকে মাওলানা ইলিয়াসের মাধ্যমে পুনর্জীবিত করেছেন। কুরআন, হাদীস এবং সাহাবাদের জীবনের আলোকে মাওলানা ইউসুফের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এবং মাওলানা ইন’আমুল হাসানের মাধ্যমে প্যাটার্ন (পদ্ধতি) সংরক্ষণ ও বিস্তৃত করেছেন। যদি এই মেহনতের প্যাটার্ন পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে ওঠে, তবে পরিবর্তনটি তিনটি দেশের (ভারত, পাকিস্তান, এবং বাংলাদেশ) শুরার সর্বসম্মত সম্মতি দ্বারা করা আবশ্যক ।

আমরা বলতে চাই যে আমরা বর্তমান অবস্থা (নিজামুদ্দিনের) নিয়ে একমত নই। এজন্য আমরা এখন থেকে ত্রৈমাসিক মাশওয়ারায় অংশগ্রহণ করছি না। এই প্রচেষ্টা শুরার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন, অন্যথায় আমরা অভিজ্ঞ পুরানো সাথীদের হারাব যারা আপনাদের এই মেহনতের পরিবর্তনের সাথে একমত নন।

তাবলীগ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য এবং নিজামুদ্দীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমি। যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, ইনশাআল্লাহ, আমরা অবিলম্বে নিজামুদ্দিনে ফিরে আসবো। এক হয়ে, হক হয়ে সকলে মিলে মেহনত করবো ইনশাআল্লহ। আজ, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের কর্মীরা প্রকৃত কাজ না করে এটা নিয়ে কথা বলার কাজে ব্যস্ত আছেন। প্রতিটি মাশওয়ারা নিজামুদ্দিনকে কেন্দ্র করে। আল্লাহ আমাদের হৃদয় থেকে দুঃখ দূর করুন এবং আমাদের দ্বীনের সঠিক ফিকিরের দিকে ফিরিয়ে দিন। আমীন।

স্বাক্ষরকারী: মাওলানা ইসমাইল গোদরা, মাওলানা আব্দুর রহমান মুম্বাই, মাওলানা উসমান কাকোসি, হাজি ফারুক আহমাদ ব্যাঙ্গালোর, মুহসিন ওসমান লখনউ, প্রফেসর সানাউল্লাহ আলিগড়, প্রফেসর আব্দুর রহমান মাদ্রাজ।

সূত্র: মজমূআ খুতূত, চিঠি নম্বর ১৪, পৃষ্ঠা ৯৩

২০১৬ জুলাই ১৮ – এই মিথ্যাচার, গালির কারণে যে, তিনি তাবলীগের নতুন আমির হতে চান, বাধ্য হয়ে মাওলানা জুহায়েরুল হাসান নিজের বিষয়ে স্পষ্ট করে একটি চিঠি লেখেন যে:

আমি বিনয়ীভাবে বলতে চাই যে আমি কখনই আমির হতে চাইনি এবং কখনও তা দাবি করিনি। আমার প্রয়াত বাবা, মাওলানা জুবায়রুল হাসান , তার সম্পূর্ণ জীবনে কখনও তা দাবি করেননি এবং চাননি। তিনি সর্বদা স্থানীয় ও বিশ্ব মাশওয়ারার আনুগত্য করেছেন। তেমন হলে, আমি কিভাবে আমির থাকা দাবি করার সাহস করবো?

সূত্র: দাওয়াত ও তাবলীগের অতি মহান প্রচেষ্টা নিয়ে বর্তমান অবস্থা, পৃষ্ঠা ৩২

সময় অতিবাহিত হতে হতে, এটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল যে তাবলিগের আমির হওয়ার আকাঙ্ক্ষা কেবল মাওলানা সাদ থেকে এসেছে। আল্লাহর ইচ্ছায়, মাওলানা জুহায়েরের ভালো নাম এই মন্দ গালির থেকে পরিশুদ্ধ হয়েছে।

সূত্র: আহওয়াল ও আছার, পৃষ্ঠা ৭৮

২০১৬ আগস্ট ১২ – যদিও তার সব সহকর্মী চলে গেছেন, মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা তবুও আশা করেছিলেন যে, দাওয়াতের মেহনত নিজামুদ্দীন মার্কাজে রক্ষা করা যেতে পারে।

তবে, মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা মাওলানা সাদের দেহরক্ষীদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন। তাকে প্রায়শই দেখা হত এবং প্রশ্ন করা হত; “মাওলানা, যদি আপনি এখানে নিরাপদ অনুভব না করেন, তবে চলে যান”

অবশেষে, মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা সিদ্ধান্ত নিলেন নিযামুদ্দিন মার্কাজ ছাড়ার। মাওলানা সাদের দেহরক্ষীরা মাওলানা ইব্রাহিমকে শান্তিতে চলে যেতে এবং নিযামুদ্দিনের ঘটনাগুলি উন্মোচন না করার হুমকি দেয়। অথচ তারা ছড়িয়েছিল যে, মাওলানা ইব্রাহিম অসুস্থতার কারণে চলে গেছেন।

সূত্র: তাবলীগের মারকাজ হজরত নিযামুদ্দিন দিল্লী কিছু বাস্তবতা, পৃষ্ঠা ১৪

২০১৬ আগস্ট ১৫ – কেন মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা নিযামুদ্দিন ত্যাগ করেছিলেন সে নিয়ে ভুল তথ্য , গুজব ছড়ানো শুরু হয়। মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা তাবলীগের সকল কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লেখেন। তিনি নিযামুদ্দিন ত্যাগের আসল কারণ, এবং গুজবগুলি প্রত্যাখ্যান করেন।

সূত্র: মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার চিঠি

২০১৬ আগস্ট ২৭ – মাওলানা ইয়াকুব, যিনি নিযামুদ্দিনের সবচেয়ে প্রবীণ উস্তাদ এবং মাওলানা সাদের এবং মাওলানা হারুন (মাওলানা সাদের বাবা) এর শিক্ষক, অবশেষে তিনিও মাওলানা সাদকে নিন্দা করে একটি চিঠি লেখেন।

সূত্র: মাওলানা ইয়াকুবের চিঠি

২০১৬ অক্টোবর ১৩ – সৌদি আরবের প্রবীণ ব্যক্তিরা (শেখ গাসসান মদীনা ও শেখ ফাদিল মক্কাহ ) একটি সম্মত বৈঠকের পরে মাওলানা সাদের সাথে দেখা করতে আসেন। তারা এসে ছিল মাওলানা সাদের এবং প্রাক্তন নিযামুদ্দিন প্রবীণদের মধ্যে তাদের পার্থক্য সমাধান করতে, মধ্যস্থতা করতে। তাই তাদের ফোন করার পর পুরো ভারত থেকে প্রবীণরা মুরুব্বিরা এসেছিল।

তবে, মাওলানা সাদ প্রবীণদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান এবং একটি হুমকিমূলক মন্তব্য করেন: “যদি এই প্রবীণরা কখনও ইখতেলাফের বিষয়ে কথা শুরু করেন, তবে আমি খারাপ বোধ করবো এবং আমার আওয়াজ উচ্চ হবে। তাহলে এই মার্কাজ এক ঘণ্টার মধ্যে মেওয়াতিদের দ্বারা পূর্ণ হবে। এই প্রবীণরা আমার ঘর ছাড়তে পারবে না, মার্কাজ ছেড়ে যাওয়া তো দূরের কথা“।

পরের দিন, মক্কা এবং মদীনার প্রবীণরা পুলিশ দ্বারা ভিজিট করেন, যারা বলেছিল যে তারা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছে। তারা হতবাক হয়ে গিয়েছিল!

অতঃপর বৈঠকটি হয়নি এবং সৌদি প্রবীণরা ও প্রাক্তন নিযামুদ্দিনের প্রবীণরা দুঃখের সাথে চলে গেছেন।

সূত্র: শেখ গাসসান মদীনা ও শেখ ফাদিল মক্কা

২০১৬ নভেম্বর ১৩ – রাইবেন্ড ইজতেমা, পাকিস্তান। কাজের সাথে বর্তমান সমস্যাগুলি সমাধানে বিভিন্ন তদন্তের জন্য অনেক আমন্ত্রণের আবেদনের পরেও, মাওলানা সাদ রাইবেন্ড ইজতেমা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। সকল প্রবীণ মুরুব্বিরা রায়ওয়িন্ড ইজতেমা এসেছিলেন, তবে তিনি আসেননি।

নিযামুদ্দিন, কাকরাইল এবং রাইবেন্ডের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে, হাজী আবদুল ওয়াহাব বলেন:

“কোন আমির কাজ করবে না। যা সম্মত হয়েছে তাই হবে (এটি ১৯৯৫ সালের চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে)। কাল, নিযামুদ্দিনের লোকেরা এলো এবং আমি তাদের সাথে কথা বললাম। যদি সাদের ইচ্ছায় থাকে যে “আমি আমির”, “আমি কেউ”, এবং সবাই তার বায়’আত করবে, তা হলেও কোন গাড়ি চলবে না (একটি রূপক অর্থে যা বোঝায় এটি কাজ করবে না)। যা সম্মত হয়েছে তা হবে। আমি নিযামুদ্দিনের জনগণকে বলেছি: মাশওয়ারার সদস্যরা আমার কাছে এসেছিল এবং তাদের সাথে আলোচনা করে, আমি তাদের সঙ্গে একমত। যখন বিভিন্ন দেশ থেকে সমস্যাগুলি আসে, মাওলানা ইউসুফ আমাকে বলেন যে, আমার শুরার সদস্যরা এখানে নেই, কিছু মক্কায় আর কিছু পাকিস্তানে। সিদ্ধান্ত তখনই হবে যখন সবাই একত্রিত হবে।

আমরা মাওলানা ইনআমুল হাসানের মৃত্যুর পর একটি মাশোয়ারায় বসেছিলাম। মাওলানা সাদ বললেন যে, যদি আমি আমীর হিসাবে নিযুক্ত হই, তবে যারা মাওলানা জুবায়েরকে চায় তারা (এই উদ্যোগ থেকে) নিজেদের বিচ্ছিন্ন করবে। যদি মাওলানা জুবায়ের আমীর হন, তবে যারা আমাকে চায় তারা (এই উদ্যোগ থেকে) নিজেদের বিচ্ছিন্ন করবে। তাই এই উদ্যোগ মাশোয়ারার মাধ্যমে চালানো উচিত এবং সেখানে বাইআত হবে না। এই বিষয়ে সম্মতি হয়েছে। আপনি কি বুঝেছেন? বড় থাকতে হলে অভিনয় করা বন্ধ করতে হবে এবং বাইআত গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে। তিনি (অর্থাৎ হাজী আব্দুল ওয়াহাব) তাদের বললেন “সবাই (নিজামুদ্দীন-এর লোকদের দিকে ইঙ্গিত করে) ফিরে যান (নিজামুদ্দীনে), এবং সেখানে আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করুন এবং যখন সেখানে পৌঁছবেন, যা কিছু মাশোয়ারায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটিই অনুসরণ করুন। এবং দোয়া করতে থাকুন। হে আল্লাহ, মানবতাকে সামনে রেখে, যা কিছু আমাকে করতে হবে, সেটা আমার হৃদয়ে দাও!”

সূত্র: হাজী আব্দুল ওয়াহাবের বিবৃতি (অডিও রেকর্ডিং)

২০১৬ নভেম্বরদারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের প্রতি একটি চিঠি পাঠিয়েছিল, যা তাকে সতর্ক করে এবং তাদের উদ্দেশ্য জানায় যে, তারা তার বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া প্রকাশ করতে চায়। তারা মনে করেছিল যে, তাকে একটি সুযোগ দেওয়া এবং তার নাম ও সম্মান রক্ষা করা উচিত।

সূত্র: মাওলানা সাদের রুজু (ইনকিশাফ হাকিকত, দাওয়াত এবং তাবলীগ সংকট)

২০১৬ নভেম্বর ৩০ – মাওলানা সাদ দারুল উলুম দেওবন্দে একটি অফিসিয়াল চিঠি পাঠালেন যাতে রুজু (তার বক্তব্য প্রত্যাহার) করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, দারুল উলুম দেওবন্দ চিঠিটি গ্রহণ করেনি কারণ এই চিঠিতে তিনি তার ভুলগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দকে তার বিরুদ্ধে জঘন্য চিন্তা করার আপবাদ দিয়েছিলেন এবং দাওয়াহের কাজের বিরুদ্ধে ছিল বলে অভিযোগ করেন। তিনি লিখেছেন:

আমি অত্যন্ত হতাশাজনক বিষয় বিবেচনা করি যে, আপনাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অসুন্দর চিন্তা রয়েছে, যারা একটি আন্তর্জাতিক একাডেমিক কেন্দ্রের জন্য দায়ী। এই অসুন্দর চিন্তা, আমার এবং আমার সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কিত মতবাদ, অবস্থান এবং পদ্ধতিগুলি দাওয়াত এবং তাবলীগ এবং এর মার্কাজের সঙ্গে সহযোগিতা না করার বিষয়কে তুলে ধরছে।

মাওলানা সাদের প্রথম রুজু চিঠি, নভেম্বর ৩০

সূত্র: মাওলানা সাদের প্রথম রুজু

২০১৬ ডিসেম্বর ৬দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের প্রথম রুজু চিঠি গ্রহণ করতে পারেনি এবং অফিসিয়ালি তাদের প্রথম ফতোয়া প্রকাশ করেছে মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে।

সূত্র: দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে প্রথম ফতোয়া, মাওলানা সাদের রুজু

২০১৬ ডিসেম্বর ১১ – মাওলানা সাদ একটি দ্বিতীয় চিঠি পাঠান দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে রুজু এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য। দারুল উলুম এতে সন্তুষ্ট ছিল এবং দুই দিন পর একটি প্রতিনিধি দল মাওলানা সাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলো।

পরবর্তিতে এক ঘটনায়, যখন প্রতিনিধি দল মাওলানা সাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিল, দারুল উলুম দেওবন্দে একটি চাঞ্চল্যকর প্রমাণ (অডিও সহ) আসে যে, মাওলানা সাদ ওই দিন ফজরের বয়ানে নবী মূসা (আঃ) সম্পর্কিত তার বিতর্কিত বক্তব্যগুলি পুনরাবৃত্তি করেছেন! প্রতিনিধি দলকে ফিরিয়ে আনা হয়।

সূত্র: মাওলানা সাদের দ্বিতীয় রুজু

২০১৬ ডিসেম্বর – মাযাহিরুল উলুম সাহারানপুর, তাবলীগের জন্মস্থান, দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ার সমর্থনে একটি ফতোয়া প্রকাশ করেছে। এটি ৮ জন স্কলার দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়, যার মধ্যে মাওলানা সালমান সাহারানপুরিও আছেন যিনি মাওলানা সাদের শ্বশুর।

সূত্র: মাযাহিরুল উলুম সাহারানপুরের মাওলানা সাদের উপর ফতোয়া

২০১৬-২০১৮ – আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত ৪০টিরও বেশি ফতোয়া সংগ্রহ করেছি। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, তিনি যে ক্ষতি করেছেন এবং সত্যিকার অর্থে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহের পথ থেকে বিচ্যুতির দিকে অগ্রসর হয়েছেন।

সূত্র: মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে ৪০টিরও বেশি ফতোয়ার সংগ্রহ

২০১৭ – একটি “ভুয়া” রুজু চিঠি ছড়িয়ে পড়ে দারুল উলুম দেওবন্দকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। এই “ভুয়া” রুজু চিঠিটি মাওলানা সাদের প্রকৃত রুজু চিঠি বলে মিথ্যা দাবি করা হয়। এই চিঠিতে দেখা যাচ্ছে যে, মাওলানা সাদ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এমনকি বলেছেন যে, তিনি শুরার সঙ্গে কাজ করতে চান।

কিন্তু মুফতি জায়েদ নদভী পরে স্পষ্ট করেন যে, এটি একটি খসড়া চিঠি যা তিনি মাওলানা সাদের জন্য তার রুজুতে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। তিনি মাওলানা সাদ এবং তাবলীগ জামাতকে একসাথে করতে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। মনে হচ্ছে তার বিশ্বাস ভঙ্গ করা হয়েছে।

সূত্র: ইনকিশাফে হাকিকত, পৃষ্ঠা ১০

২০১৭ সেপ্টেম্বর – বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম বিষয়টিতে তাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের মধ্যে, সরকারী প্রতিনিধিদের, কাকরাইলের শুরার, এবং দারুল উলুম দেওবন্দের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতার জন্য তারা মাওলানা সাদকে শর্ত দিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র তখনই টঙ্গী ইজতেমায় প্রবেশ করতে পারবেন যদি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মানা হয়:

  1. মাওলানা সাদকে মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা এবং মাওলানা আহমদ লাটের সঙ্গে মিলিত হয়ে টঙ্গী ইজতেমায় আসতে হবে।
  2. মাওলানা সাদকে দারুল উলুম দেওবন্দের নিকট পূর্ণ রুজু করে আসতে হবে।

সূত্র: ইনকিশাফে হাকীকত, পৃষ্ঠা ২২

২০১৭ নভেম্বর ১১ – রাইবেন্ড ইজতেমা, পাকিস্তান। মাওলানা সাদ উপস্থিত ছিলেন না। তবে, নিজামুদ্দিন থেকে একটি প্রতিনিধিদল এসেছিল, যার মধ্যে ছিলেন মাওলানা শওকত, মুফতি শেহজাদ, এবং ভাই মুরসালিন। হাজী আবদুল ওয়াহাব পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫০০ দায়িত্বরত ভাই এবং শুরাদের সংগ্রহ করেন রাইবেন্ড মার্কাজে সকাল ১১:০০ টায়। হাজী আবদুল ওয়াহাব ইখতিলাফ সম্পর্কে বোঝান। মাওলানা ইউসুফের কিছু বক্তব্য পাঠ করার পর, তিনি বললেন,

নিজামুদ্দিন মার্কাজের মানুষেরা এখন তওবা করতে এবং ইস্তিগফার করতে হবে। তোমাদের মধ্যে কেউ নিজামুদ্দিনে যাবে না। নিজামুদ্দিন মার্কাজ আগের মতো নেই। এখন নিজামুদ্দিনের উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের, যারা আল্লাহর পথে বের হয় না। মাওলানা সাদও আল্লাহর পথে ৪০ দিনও বের হননি।”

সূত্র: হাজী আবদুল ওয়াহাবের বক্তব্য, রাইবেন্ড ইজতেমা, নভেম্বর ২০১৭

২০১৮ জানুয়ারি ১০মাওলানা সাদকে টঙ্গী ইজতেমায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়নি, বাংলাদেশে। এর কারণ ছিল মাওলানা সাদ সেপ্টেম্বর ২০১৭ এ বাংলাদেশি শীর্ষ উলামাগণের দ্বারা নির্ধারিত প্রবেশ শর্তগুলি পূরণ করেননি।

তবে মাওলানা সাদ থাইল্যান্ড থেকে একটি ভ্রমণ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। যখন এই কৌশলটি জানাজানি হলো, উলামাগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন, কারণ এটি বাংলাদেশের শীর্ষ উলামাদের নির্দেশের প্রতি বিদ্রোহ এবং অবমাননা হিসেবে দেখা হয়েছিল। হাজার হাজার উলামা মাওলানা সাদের আগমনবিরোধিতায় প্রতিবাদ করেন এবং ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সমস্ত বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন।

বাংলাদেশের ওয়াসিফুল ইসলাম গোপনে মাওলানা সাদকে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে কাকরাইল মার্কাজে প্রবেশ করান। যখন এই কৌশলটি ধরা পড়ে, হাজার হাজার উলামা কাকরাইল মার্কাজকে ঘিরে ধরলেন এবং মার্কাজের সব বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিলেন।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

২০১৮ জানুয়ারি ১১ – ৫৩ তম টঙ্গী ইজতেমা, বাংলাদেশে শুরু হলো। মাওলানা সাদের আগমনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের ঢেউয়ের কারণে, বাংলাদেশ সরকার মাওলানা সাদ এবং তার অনুসারীদের টঙ্গীতে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

২০১৮ মার্চ ২০ – সঙ্কটের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশ্ন এসেছিল। এর কারণে, সর্বাধিক প্রবীণ বুযুর্গগণ হাজী আবদুল ওয়াহাব সাহেবের নেতৃত্বে একটি স্পষ্ট বিবৃতি এবং চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছেন:

“এই সমস্যার সমাধান এককভাবে একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে”

(১) মাওলানা সাদ (বিশ্ব/আলামী) শুরাকে গ্রহণ করে তাদের মধ্যে ঘুর্ণায়মান ফায়সালের (নির্ধারণী চেয়ারপার্সন) বিষয়টি মেনে নিতে হবে।

(২) তাবলীগের মেহনত অনুমোদিত এবং মূল প্যাটার্ন এবং তত্ত্বে মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা ইউসুফ, এবং মাওলানা ইনআমুল হাসানের নীতি মেনে চলতে হবে। মাওলানা সাদকে শুরার অনুমোদন ছাড়া কোন পরিবর্তন আনার অনুমতি নেই।

(৩) মাওলানা সাদকে দারুল উলুম দেওবন্দের আপত্তি সামনে রেখে যে সব বক্তব্য এবং ধারণা প্রচার করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। তাঁকে দারুল উলুম দেওবন্দের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার জন্য যা কিছু করার তা করতে হবে।”

স্বাক্ষর করেছেন: হাজী আবদুল ওয়াহাব, মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা, মাওলানা জুহাইরুল হাসান, মাওলানা আবদুর রহমান মুম্বাই, মাওলানা উবায়দুল্লাহ খুরশীদ, ভাই হাশমত আলী, চৌধুরী মুহাম্মাদ রফিক, মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব, মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা নাজরুর রহমান, মাওলানা জিয়াউল হক, মাওলানা উসমান কাকোসি, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা আহমদ বাটলাহ, ডাক্তার রুহুল্লাহ, ভাই বাবর জাভেদ, মিয়া মুহাম্মাদ আনোয়ার, ভাই ইরশাদ আহমেদ, ভাই ফিদা মুহাম্মাদ পিরাচা, অধ্যাপক মুহাম্মাদ শাহিদ, ভাই বখত মুনির, ভাই সুলতান ইকবাল, ভাই নওশাদ বেগ, ভাই মুহাম্মাদ আলী, ডাক্তার মঞ্জুর আহমেদ।

সূত্র: হাজী আবদুল ওয়াহাবের যৌথ চিঠি

২০১৮ নভেম্বর ১৮ – হাজী আবদুল ওয়াহাব সাহেব ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। এই ধরনের মৃত্যু প্রিয় নবী (সা.) এর একটি সুন্নাহকে অনুকরণ করে, যিনি উচ্চ জ্বরের কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৯৬ বছর।

হাজী আবদুল ওয়াহাবের জানাজা পরিচালনা করেন মাওলানা নাজরুর রহমান, যিনি তখন ৯০ বছর বয়সী ছিলেন। হাজার হাজার লোক হাজী আবদুল ওয়াহাবের জানাজার নামাজে অংশ নেন।

Haji Abdul Wahhab Grave
হাজী আবদুল ওয়াহাবের কবর

হাজী আবদুল ওয়াহাবের কবরে এক সুন্দর সুগন্ধ বের হয়ে আসার একাধিক সাক্ষী ছিলেন। মাওলানা মাক্কি আল হিজাজী দাবী করেন যে, সুগন্ধটি আল্লাহ তাআলার প্রমাণ যে, তিনি সত্যের পক্ষের মানুষ (আহলুল হক) ছিলেন, যদিও কিছু লোক তাকে অস্বীকার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে (যেমন তাবলীগ জামাতের বিভাজন এর কারণে)।

সূত্র:  মাওঃ সা’দের বিষয়ে হাজী আঃ ওয়াহাব সাহেবের সতর্কীকরণমূলক চিঠি)

চলবে…

Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Facebook Facebook